বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। সোনার ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছে কৃষক। এমন সময় ধানের ক্ষেতে বাসা বেঁধেছে ‘নেক ব্লাস’ । হুমকির মুখে পড়েছে ধানের ফলন। আবাদি জমির একটা বড় অংশে আঘাত হেনেছে নেক ব্লাস্ট। ধানের এই সংক্রামক রোগ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতে। পাকা ধানের শীষগুলো ধীরে ধীরে হালকা সাদা ও পরে পাতান (চাল বিহীন) হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক ব্যবহার করেও নেক ব্লাস্টের প্রতিকার করতে পারছেন না কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, আগামী দু-সপ্তাহের মধ্যে উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পাকা বোরো ধান মাড়াইয়ের পর্যায়ে যাবে। এই সময়ে নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ হওয়ায় ভালো ফলন নিয়ে শংকা তাদের।
সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর এলাকার কৃষক মোস্তাকিম বলেন, আমার ধান প্রায় পেকে গেছে। ধানের গাছ দেখে ভালো ফলনও আশা করছি। কিন্তু ক্ষেতের কিছু কিছু অংশে নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ হওয়ায় কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলার বোতলাগাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব বলেন, আমার ধান খুব ভালো হয়েছিল। হঠাৎ ব্লাস্ট ধরে ক্ষেতের অনেকাংশের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কয়েক প্রকার কিটনাশক ব্যবহার করেও ভালো ফল পাচ্ছি না। সৈয়দপুর পৌর বাঁশবাড়ি বাইপাস সড়ক ও মিস্ত্রিপাড়া এলাকার কৃষক মো: শরিফুল হক ও মো: রফিকুল ইসলাম নামের কৃষকরা জানান, এবার বেশির ভাগ জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাত বেশি। এতে সমস্ত ব্রি-২৮ জাতের ধানক্ষেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে আর ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কাঁচা ব্রি-২৮ ধানের পরিচর্যা চলছে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে।তাই আশা করছি নতুন আক্রান্ত বাড়বে না।
সৈয়দপুর কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৯,ব্রি-২৮, ব্রি-১৬, ব্রি-৫০ ও হাইব্রিড উপজাত চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ উপজাতের ধান ৪৫ ভাগ চাষাবাদ করা হয়েছে। আর ব্রি-২৮ ধানে ধরেছে এ মহামারি ব্লাস্ট রোগ। ছত্রাকজনীত এ রোগের প্রার্দুভাব হচ্ছে তাপদাহের কারণে। দিনে গরম ও রাতে শীত। এতে লিফ ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। লিফ ব্লাস্ট ধানের পাতা ও নেক ব্লাস্ট শিষের নিচের অংশে হয়েছে। প্রতিরোধে ছত্রাক নাশক ট্রাইসাই কোনাজল সাথে প্রপিকোনাজল জাতীয় ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এতে নতুন করে কোন শিষ এ রোগে আর আক্রান্ত হবে না বলে জানান, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম। তবে অতিরিক্ত তাপদাহে এ রোগ ছড়াচ্ছে। তাই ওষুধের পাশাপাশি বৃষ্টিপাত হলেই রোগের প্রকোপ কমবে বলে তিনি মতামত প্রকাশ করেন।