spot_img

এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করনীয়

অবশ্যই পরুন

প্রত্যেক বছরের সাথে সাথে গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ প্রকটতা সাথে বেড়েই চলছে, ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো হিটস্ট্রোক। হিটস্ট্রোক একটি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা, যার ফলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তবে এই গরমে একটু সতর্কতার সাথে চললেই আমরা বাঁচতে পারি এই সমস্যা থেকে।

প্রথমেই জেনে নেই হিট স্ট্রোক কি?

হিট স্ট্রোক : অতিরিক্ত গরমে বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের শরীর নিজের ভেতরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করে। বাইরের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আমাদের ত্বকের শিরাগুলো প্রসারিত হয় অতিরিক্ত তাপ বাইরে বের করে দেয়। আবার ঘাম হওয়ার ফলেও আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা শীতল হয়। প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে আমাদের শরীর থেকে অনেক লবণ ও পানির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব হওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা , প্রচন্ড পিপাসা ইত্যাদি শারীরিক অস্বস্তির দেখা দেয়। এ অবস্থার নাম “হিট ক্র্যাম্প” বা “হিট এক্সোশন” ।

অতিরিক্ত গরমে বা আদ্র পরিবেশে অনেকক্ষণ অবস্থান করার ফলে অথবা শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে পরে। দেহের তাপমাত্রা ১০৫° ফারেনহাইট এর‌ বেশি হলে একে হিট স্ট্রোক বলা হয়।

হিট স্ট্রোক হলে আমাদের করণীয় :

* প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগেই যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সোশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

* আপনার পাশের কোনও ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হলে তাকে দ্রুত শীতল কোনও স্থানে নিয়ে যান। ফ্যান বা এসি চালিয়ে দিন।

* ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে রোগীর কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করুন।

* যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তাহলে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

রমজান মাসে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয় : গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রকটতা এমনি বেশি থাকে তার ওপর এবারের রমজান মাস গ্রীষ্মকালেই। রমজান মাসে রোজা থাকার ফলে আমরা এমনিতেও দিনের বেলা পানি খেতে পারিনা যার ফলে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই রোদের তীব্র তাপমাত্রায় আমাদের শরীর দেহ থেকে ঘাম বের করতে অক্ষম হয়ে পরতে পারে। সেহেতু আমারা একটু সতর্কতার সাথে চললেই হিট স্ট্রোক থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হবো। তাই ইফতারি থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত বেশি বেশি পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেসকল খাবার আমাদের শরীরকে অনেকক্ষণ সময় পর্যন্ত ডিহাইড্রেড রাখতে পারবে, সেই সকল খাবার গ্রহণ করতে হবে।

কাঁচা আমের শরবত : গ্রীষ্মকালে কাঁচা আম সহজলভ্য। কাঁচা আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে আমের জুড়ি নেই। তাই গ্রীস্মের প্রকটতার থেকে বাঁচতে কাঁচা আমের শরবত ইফতারিতে রাখতে পারি। অথবা কাঁচা আম তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তেঁতুলের শরবত : দ্রুত শরীরকে ঠান্ডা করতে তেঁতুলের শরবত অত্যন্ত উপকারী। সাথে চিনি ও লবণের সংযোগে তৈরি করা তেঁতুলের শরবত আরো বেশী সুস্বাদু করে তোলে এবং শরীরকে দ্রুত পানিস্বল্পতা থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যা শরীরকে দীর্ঘক্ষন সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

ডাবের পানি : হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে ডাবের পানির মতো প্রাকৃতিক উপাদানের জুড়ি নেই। এটি তাৎক্ষণিকভাবে শরীরকে ঠান্ডা করে এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। অতিরিক্ত গরমে শরীরকে ডিহাইড্রেশন হওয়া থেকেও রক্ষা করে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পিপাসাকে রোধ করে এবং এতে অন্যান্য খনিজ লবণ বিদ্যমান যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

আখের শরবত : শরীরে পানি স্বল্পতার সমস্যার জন্য আখের শরবত অনেক উপকারী। এটি তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও আখের শরবত প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খেতেও সুস্বাদু।

লেবুর শরবত: হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য লেবুর শরবত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরকে দ্রুত সতেজ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয় যা শরীরের তাপমাত্রা কে স্বাভাবিক করে। এর সাথে ধনিয়া ও পুদিনা মিক্স করে শরবত তৈরি করলে তাও শরীরের জন্য উপকারী।

মাঠা : আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে প্রতিদিন এক গ্লাস মাঠা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। এটা প্রোবায়োটিক্সয়ের ভালো উৎস এবং গরমে পানিস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই গরমের অস্বস্তি থেকে বাঁচতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মাঠা যুক্ত করুন।

অ্যালোভেরার শরবত : রোদপোড়া থেকে বাঁচতে অ্যালোভেরার শরবত অনন্য। এটা হজমে সাহায্য করে, বুক জ্বালাপোড়া কমায় এবং পেটের নানা রকম সমস্যা দূর করে। গরমে প্রতিদিন এক গ্লাস অ্যালোভেরার শরবত পান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।

পেঁয়াজের রস : হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার অন্যতম ভালো উপায় হলো পেঁয়াজের রস। অনেকেই এর ঝাঁজালো স্বাদ পছন্দ করে না। তবে এর রস ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন। পেঁয়াজের রস গরম থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

উপরের বর্ণিত পানীয় গুলো আমাদের শরীরের পানিস্বল্পতা হওয়া থেকে রক্ষা করে। এসকল পানীয় গুলোর মধ্য থেকে নিজের পছন্দনীয় পানি ও ইফতারে রাখতে চেষ্টা করব। এছাড়াও তার থেকে সেহরি পর্যন্ত বেশি বেশি পানি খাওয়ার চেষ্টা করব। যেহেতু করোনাকালীন সময় চলছে তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকব। অতি প্রয়োজনীয় বের হলেও আমরা রোদের তাপ এড়িয়ে চলব। ঢিলে ঢালা পোশাক পরিধান করব। প্রয়োজনে ছাতার ব্যবহার করব।

লেখক : সাদিয়া তাবাসসুম তালহা (শিক্ষানবিশ) অফিসিয়াল ভলান্টিয়ার, নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশ।

সর্বশেষ সংবাদ

সশস্ত্রবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়লো আরও ৬০ দিন

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ