পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটিতে চলমান সহিংসতার ঘটনায় সেখানকার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, দেশের ক্ষতিসাধনের জন্য ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামের অপব্যব্হার করছে। নিজেদের স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার না করতে দলগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
কয়েক মাস আগে ফ্রান্সের বিতর্কিত ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোতে ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের ঘটনায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাব্বাইক-পাকিস্তান (টিএলপি) দেশটিতে সহিংস-বিক্ষোভ করে আসছে।
রোববার লাহোরে এই দলটির সশস্ত্র সমর্থকরা পুলিশের সদর দফতরে জিম্মিদশা তৈরি করে। এতে নিরাপত্তাবাহিনীর অন্তত ৬ সদস্য নিহত এবং আহত হন আরও অনেকে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর সোমবার সকালের দিকে পুলিশের সদস্যদের মুক্তি দিয়েছে টিএলপি।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, অনেক সময় আমাদের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দলগুলো ইসলামকে ভুলভাবে ব্যবহার করে। এটিকে তারা এমনভাবে ব্যবহার করে যাতে নিজ দেশেরই ক্ষতি হয়।’
পাক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণ পবিত্র নবীকে (সা.) ভালোবাসেন।’ ধর্ম এবং হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি পাকিস্তানিদের যে ধরনের ভালোবাসা; তা বিশ্বের আর কোথাও, কোনো দেশে তিনি দেখেননি বলে মন্তব্য করেন।
নবীকে (সা.) কে কত বেশি অথবা কম ভালোবাসেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কে— প্রশ্ন করে ইমরান খান বলেন, আমি দুঃখ পেয়েছি যে, অসংখ্যবার এই ভালোবাসার অপব্যবহার হয়েছে। সরকার কি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়? হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি যখন অসম্মান দেখানো হয়; তখন আমরা কি কষ্ট পাই না?
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের হাজার হাজার ইসলামপন্থীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দেশটির কট্টরপন্থী দল টিএলপির নেতা আল্লামা সাদ হুসাইন রিজভিকে গত সোমবার গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
আল্লামা সাদকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন শুরু করে টিএলপি। রোববার টিএলপির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারের বেশি। দেশজুড়ে সহিংস তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই ইসলামের উপকার হবে না। এতে শুধুমাত্র পাকিস্তানেরই ক্ষতি হবে। যেসব দেশে ব্ল্যাসফেমি কর্মকাণ্ড ঘটছে সহিংস বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না।’
ইমরান খান বলেন, এমন এক সময় আসবে যখন পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নবী মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননার আগে দু’বার চিন্তা করবে। আমরা যদি সব মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত করে একটি প্রচারণা শুরু করি… তাহলে এটি এক ধরনের পার্থক্য তৈরি করবে এবং পশ্চিমে পরিবর্তন আসবে। অন্যথায় আমরা প্রতিনিয়ত দেশে ভাঙচুর করে যাবো এবং এটি পশ্চিমা বিশ্বে কোনো ভিন্নতা আনবে না।
সূত্র: ডন।