কিউবায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন রাউল কাস্ত্রো। এর মাধ্যমে দ্বীপদেশটিতে কাস্ত্রো পরিবারের প্রায় ছয় দশকের শাসনের অবসান হচ্ছে।
৮৯ বছর বয়সী রাউল জানিয়েছেন, তিনি ‘তীব্র ইচ্ছাশক্তি এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় পরিপূর্ণ’ নবীন প্রজন্মের কারও হাতে নেতৃত্বের ভার তুলে দিতে চান। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে কাস্ত্রো পরিবারের কিউবা শাসন, যা শুরু হয়েছিল বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে।
একটি অধ্যায়ের অবসান
রাউল কাস্ত্রোর পদত্যাগের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের। ১৯৫৯ সালের পর এই প্রথমবার কাস্ত্রো পরিবারের বাইরের কেউ কিউবায় নেতৃত্ব দিতে চলেছেন।
১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার তৎকালীন সরকার উৎখাতে নেতৃত্ব দেন ফিদেল কাস্ত্রো। এতে তার কমান্ডার হিসেবে ছিলেন ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রো।
২০০৬ সালে ফিদেল কাস্ত্রো অসুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৮ সালে তিনি নেতৃত্ব তুলে দেন রাউলের হাতে। ২০১৬ সালে মারা যান কিউবার ঐতিহাসিক এ বিপ্লবী নেতা।
রাউলের অধীনে কিউবার পথচলা
নেতা হিসেবে রাউলও কিউবায় একদলীয় শাসন কায়েম রেখেছেন। তার আমলেই ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছিল দ্বীপটির। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে রাউলের ঐতিহাসিক একটি বৈঠকও হয়েছিল।
তবে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতালাভের পর ফের সম্পর্কের অবনতি হয় দুই দেশের। এসময় কিউবার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কিউবা নীতির পরিবর্তন তাদের অগ্রাধিকার তালিকাতে নেই।
এরপর কী?
কিউবার শীর্ষ নেতৃত্বে এমন সময় পরিবর্তন আসছে, যখন দ্বীপটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে। করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধাক্কা খেয়েছে কিউবার অর্থনীতি। গত বছর এটি অন্তত ১১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
এর বাইরেও কিউবার নতুন নেতৃত্বকে আরও একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তা হচ্ছে, জনতার আদর্শগত ঐক্য ধরে রাখা। ইন্টারনেট-সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সরকারবিরোধীরা সহজেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং ভিন্নমতের প্রচার চালাতে পারে। অবশ্য এধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেভাগেই সতর্ক ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি।
তাছাড়া, নেতৃত্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিউবার রাজনীতিতে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। ২০১৯ সালে দেশটির নতুন সংবিধানে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় আধিপত্য এবং ‘সমাজতন্ত্রের অপরিবর্তনীয়তা’ নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুক্রবার হাভানায় দলীয় কংগ্রেসে রাউল কাস্ত্রো বলেছেন, আমি একজন সাধারণ বিপ্লবী যোদ্ধা হিসেবে অবসর নিচ্ছি। যতক্ষণ জীবিত রয়েছি, আমি আমার পিতৃভূমি, বিপ্লব ও সমাজতন্ত্র রক্ষায় পা বাড়াতে প্রস্তুত।
রাউল এখনও তার উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশশাসনের ভার পেতে চলেছেন মিগুয়েল ডিয়াজ-কানেল। তিনি ২০১৮ সাল থেকে কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। চার দিনব্যাপী দলীয় কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন কাস্ত্রো-পরবর্তী যুগে কিউবার প্রথম শীর্ষ নেতা।
সূত্র: বিবিসি