মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতার বিজয়ের মাধ্যমে মিমাংসিত হয়েছে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক শক্তির দেশ। আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় আমরা বাঙালি। সে লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, ত্রিশ লক্ষ শহিদ জীবন দিয়েছেন, দুই লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আমরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবিলা করেছি একাত্তরে। একাত্তর সালেই সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দেশ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নয়, অসাম্প্রদায়িক শক্তির। সে বাংলাদেশকে ধরে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সূচিত হয়, তখন তাকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে। তারপর আবার স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ২৬ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় তারা বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের মোকাবিলা করেই আজ আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এ অবস্থায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে জঙ্গি আচরণের মধ্য দিয়ে যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
মঙ্গলবার পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনার সার, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলী রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
ইসলামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সরকার ও শেখ হাসিনা সরকার যা করেছে তা অন্য কোন সরকার করেনি উল্লেখ করে এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে শেখ হাসিনা ইসলামের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্য ধর্মের জন্যও কাজ করছেন। অথচ একদল ধর্ম ব্যবসায়ী বোঝাতে চাইছে শেখ হাসিনার কাছে ইসলাম নিরাপদ নয়। ইসলামের যারা প্রকৃত আলেম-ওলামা তারা এতে বিশ্বাস করেন না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রকৃত ইসলামকে যারা ধারণ করেন তারা এ জাতীয় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত নন। অননৈতিক কাজে যারা জড়িত তাদের কাছে ইসলাম নিরাপদ কীনা ভাবতে হবে। যারা একাত্তরে ধর্ষণ, লুন্ঠনে সহায়তা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে তাদের হাতে ইসলাম নিরাপদ কীনা সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, এ সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এই বাংলাদেশ যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে। এজন্য যেখানে যখনি অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা সৃষ্টি করবে তখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের সমূলে বিনাশ করতে হবে।
বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার উল্লেখ করে এ সময় তিনি আরো যোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হবার পর যেমন কৃষকদের বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একই প্রক্রিয়ায় সে ধারা অব্যাহত রেখেছেন। আজ কৃষকদের কোথাও হাহাকার করতে হয় না। শেখ হাসিনা সরকার না চাইতেই কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে কৃষি সরঞ্জামাদি, সার, কীটনাশক সরবরাহ করছে। কৃষকদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে আমরা খাদ্যে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারবো। আজ দেশ মাছ, মাংস, ডিমসহ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
করোনাকালে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের মাঠে কৃষকদের সহায়তা করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। একজন মানুষও যেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ তুলতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক করেন তিনি।
মন্ত্রী আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। লকডাউনের নীতি-নিয়ম অনুসরণ করে কৃষি কাজ চালিয়ে যাওয়া, খাদ্য উৎপাদন করা এবং মানুষের প্রয়োজনীয় সকল কিছুর যোগান আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। না হলে দেশের মানুষ বিপন্ন অবস্থায় পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নাজিরপুরের বিশিষ্ট সমাজ সেবক এস এম নজরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মুস্তাফিজুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ফেরদৌস রুনা, নাজিরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ফরাজী, পিরোজপুর জেলা পরিষদ সদস্য সুলতান মাহমুদ খান, উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন মিয়া, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিগবিজয় হাজরা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মন্ডল, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, নকৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।