রোজায় স্বাভাবিকভাবেই খাদ্যাভ্যাসে আসে বড় পরিবর্তন। সাধারণত আমরা দিনে তিনবেলা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু রোজার সময়ে খাবারের এই পরিচিত নিয়ম পাল্টে যায়। ভোররাতে সাহরি খেয়ে রোজা শুরু হয়, শেষ হয় মাগরিবের আজান শুনে ইফতার করার মাধ্যমে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোজা পালন করেন মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা। বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে আলাদা খাদ্যাভ্যাস বলেই এসময় খাবারের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হবে। এমন সব খাবার খেতে হবে, যেগুলো শরীরের জন্য বেশি উপকারী। সাহরি, ইফতার ও রাতের খাবারে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর সব খাবার। শিশু, বয়স্ক কিংবা ক্রনিক অসুখে ভুগছেন এমন কারও প্রতি হতে হবে বেশি যত্নশীল।
সাহরিতে কী খাবেন
ঘুম ভেঙে খেতে হয় বলে সাহরিতে খাওয়ার রুচি খুব বেশি থাকে না। আবার সাহরিতে পেট ভরে খেলেও সারাদিনের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয় না। কারণ আমাদের প্রতিদিন তিনবেলা খাওয়ার অভ্যাস। তবে সাহরিতে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যেগুলো দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখবে। বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার ও কম তেল-মশলায় রান্না করা খাবার খেতে পারলে বেশি ভালো হয়। এতে করে দিনের সময়টা ক্ষুধা কম লাগবে এবং সতেজ অনুভব করবেন। সাহরিতে ভাতের সঙ্গে অল্প মশলায় রান্ন করা তরকারি, মুরগির মাংস, ডাল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। খাবারের শেষে এক বাটি দই খেতে পারেন। সেইসঙ্গে কয়েকটি খেজুর খেলে সারাদিন ক্ষুধার অনুভূতি কম হবে। ভাত খেতে না চাইলে রুটি কিংবা চিড়া খেতে পারেন। তবে পোলাও-খিচুড়ির মতো ভারী খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
ইফতারে কী খাবেন
সারাদিন খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকার কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। যে কারণে ইফতারের সময়ে আমাদের শরীর স্নায়ুকোষ ও মস্তিষ্ক খাবারের মাধ্যমে শক্তির জোগান পেতে চায়। ইফতারে তাই ভাজাপোড়া বা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার না খেয়ে সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। ইফতারের খাবার দুই ভাগ করে খান। মাগরিবের নামাজের আগে হালকা কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে নিন। নামাজের পরে বাকি খাবার খান। এতে হজম সহজ হবে। একসঙ্গে বেশি খাবার খাওয়া হয়ে গেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। ইফতারে সাধারণত ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। স্যুপ, ছোলা, সবজি, সালাদ, খেজুুর, মুড়ি, ডিম, ফলের রস, লাচ্ছি, ডাবের পানি, ফল এসব খাওয়া যেতে পারে। আরেকটু ভারী খাবার চাইলে হালিম, মোমো, নুডলস, কাস্টার্ড ইত্যাদি খেতে পারেন।
রাতের খাবারে যা থাকতে পারে
রাতের খাবার যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। সাহরির মতোই ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে মাছ বা মুরগির মাংসা, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন। ইফতারে ভারী খাবার খেলে রাতের খাবারে হালকা কিছু খেতে পারেন। খাওয়ার ইচ্ছে না হলে জোর করে খাবেন না। অল্প-স্বল্প ক্ষুধা পেলে একগ্লাস দুধ বা একবাটি দই খেতে পারেন।
শিশুর খাবার
অনেক শিশু শখ করে রোজা রাখে। সেক্ষেত্রে তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এতে তার পরবর্তীতে রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে উঠবে। কিন্তু শিশুকে প্রতিদিন রোজা রাখতে দেবেন না। কারণ এতে তাদের শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। শিশু যেদিন রোজা রাখবে সেদিন তার খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিন। তার সব খাবার যেন হজমে সহায়ক হয়। অনেক শিশু সারাদিন রোজা রাখার পরে মুখরোচক সব খাবার খেতে চায়। তাদের সেসব খাবার খেতে দেবেন না। কারণ ইফতারে ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া খাবার খেলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শিশু যেদিন রোজা না রাখবে সেদিন তাকে বাসী খাবার খেতে দেবেন না। বরং সহজে রান্না করা যায় খাবার তাকে তৈরি করে দিন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার সব সময়ই পরিমাপমতো খেতে হয়। খাবারে অনিয়ম হলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। রোজার সময়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার ভয় থাকে। তাই খাবার এমনভাবে খেতে হবে যেন ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইফতারে ফলের রস, ডাবের পানি, ছোলা, সালাদ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। অল্প হলেও খেতে হবে। রাতে কতটুকু ভাত খেতে পারবেন তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। হালকা মশলায় রান্না করা মাছ, সবজি, মুরগির মাংস ইত্যাদি খেতে পারেন। ইফতারে একসঙ্গে অনেক খাবার না খেয়ে বিরতি দিয়ে ভাগ ভাগ করে খান। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দিনের ওষুধগুলো পরিবর্তন করে রাতে গ্রহণ করুন। ওষুধের সময়সূচি নিজে পরিবর্তন করবেন না, এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
গর্ভবতীর খাবার
অনেক গর্ভবতী রোজা রেখে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি। এসময় এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। পান করতে হবে প্রচুর পানি। খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে, কোনোরকম তাড়াহুড়ো করা যাবে না। যেসব খাবারে হবু মা ও গর্ভস্থ শিশুর শরীর ভালো থাকবে, তাই খেতে হবে।
সুস্থ থাকুন
রোজা রাখার কারণে স্বাভাবিকভাবেই শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ইফতারে এমন খাবার খান যা একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও দ্রুত শক্তি জোগায়। এমন খাবারের তালিকায় রয়েছে ছোলা, খেজুর, কলা, আঙুর, ডিম, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি। এগুলো শক্তি ও পুষ্টির জোগান দেয়। পাশাপাশি পূরণ করে শরীরে খনিজ ও পানির ঘাটতি। কৃত্রিম ফলের রস, কেমিক্যালযুক্ত পানীয় বর্জন করুন।