আনপ্রেডিক্টেবল, অননুমেয়। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কথাটা দারুণভাবে প্রচলিত। কিন্তু অধিনায়ক বাবর আজমে সে গুণটা নেই মোটেও। শেষ ২৬ ইনিংসে করেছেন দুই অঙ্কের রান, টানা দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন শতকের দেখা। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সফরের সূচনাটা ভালোই করেছে দল। তবে নিজেও দারুণ এক রেকর্ড করে নিয়েছেন নিজের নামে, পেছনে ফেলেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দারুণ ধারাবাহিক বাবর। শেষ ২৬ ম্যাচে যেন তিনি আরও অপ্রতিরোধ্য। দুই অঙ্কে গেছেন সব ইনিংসে, ৪০ এর কমে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ৮ বার, অর্ধশতক আছে সমান সংখ্যক আর সর্বশেষ ইনিংসসহ শতকের সংখ্যা চার। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় অবস্থানেও আছেন স্বাভাবিকভাবেই, শিগগিরই কোহলিকে ছাড়িয়ে উঠে যাবেন চূড়াতেও।
সে কীর্তির আগে আরও এক জায়গায় কোহলিকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবর। সঙ্গে পেছনে ফেলা হয়ে গেছে আরেক কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকান হাশিম আমলাকেও। ৭৬তম ইনিংসে এসে ১৩তম ওয়ানডে শতক পেলেন বাবর, যা ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম। সমান সেঞ্চুরির জন্য আমলাকে খেলতে হয়েছিল ৮৩ ইনিংস। আর কোহলি খেলেছিলেন ৮৬টি। নারী ক্রিকেটও হিসেবে আনলে বাবর ছুঁয়েছেন রেকর্ড। অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক মেগ ল্যানিংও ১৩তম শতক পেতে খেলেছিলেন সমান সংখ্যক ইনিংস।
একটা জায়গায় অবশ্য অনন্য বাবর। পাকিস্তানের ইতিহাসে আর কোনো অধিনায়কই টানা দুই ইনিংসে শতক পাননি, যেটা তিনি করে দেখিয়েছেন। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ইনিংসেও তিনি করেছিলেন ১২৫ রান। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস যে কোনো সফল রান তাড়ায় কোনো পাকিস্তানি অধিনায়কের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
রান তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরির ক্ষেত্রেও দারুণ গতিতে এগিয়ে চলেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৪০তম বারের মতো পরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি, পেয়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ শতক। স্বদেশিদের মধ্যে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল সাঈদ আনোয়ার, পরে ব্যাট করে ১০৫ ইনিংসে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ১০টি। বাবর যেভাবে এগিয়ে চলেছেন, তাতে পাকিস্তান কিংবদন্তির কীর্তিও আছে ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার এই ইনিংসে দলীয় অনেক অর্জনও ধরা দিয়েছে পাকিস্তানের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে এটাই এখন তাদের সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। যে কোনো স্বাগতিক দলের বিপক্ষে এর চেয়ে বড় রান তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে আর কেবল দুটো।
শেষ বলে জেতার ক্ষেত্রেও রেকর্ডের অনেক কাছে চলে এসেছে পাকিস্তান। শুক্রবার নিজেদের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো শেষ বলে ম্যাচ জিতল দলটি। তাদের চেয়ে বেশি এ কীর্তি আছে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকারই, সাত বার। পাকিস্তানের সর্বশেষ শেষ বলের জয়টি এসেছে প্রায় ১৬ বছর পরে। শেষবার ২০০৫ সালে আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে জিতেছিল ইনজামাম উল হকের দল, শচীনের করা শেষ ওভারের শেষ বলে চার মেরে জয়টা নিশ্চিত করেছিলেন অধিনায়ক ইনজামামই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৭৩/৬ (ফন ডার ডাসেন ১২৩*, মিলার ৫০, ফেলুকওয়ায়ো ২৯, রাবাদা ১৩*; আফ্রিদি ৬১-২, ফাহিম ২৫-১, রউফ ৭২-২)।
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৭৪/৭ (ইমাম ৭০, বাবর ১০৩, রিজওয়ান ৪০, শাদাব ৩৩; রাবাদা ৫১-১, নরকিয়া ৫১-৪, ফেলুকওয়ায়ো ৫৬-২)।
ফলাফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে পাকিস্তান।
ম্যাচসেরা: বাবর আজম।