দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কোনো ইউরোপীয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের একমাত্র নজির আছে জার্মানির। বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সফল দলও ‘ডাই ম্যানশ্যাফটরা’। সেই জার্মানিই কিনা এখন ঘোর দুর্দশায়! এতটাই যে, এখন ঘরের মাঠেও পুঁচকে দলের কাছে হারছে তারা।
ইতিহাসে এর আগে জার্মানির বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হারের নজির ছিল কেবল দুটো। সর্বশেষটা সেই ২০০১ সালে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সেই ভুলতে বসা বিস্বাদটাই উপহার দিয়েছে উত্তর মেসিডোনিয়া, হারিয়েছে ২-১ গোলে।
আইসল্যান্ড ও রোমানিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু করা জার্মানি বৃহস্পতিবার রাতেও ম্যাচটা শুরু করেছিল বেশ দাপট নিয়েই। পুঁচকে দলগুলোর বিপক্ষে বড়দের খেলায় যেমন হয়, বলের দখল ও আক্রমণে প্রতিপক্ষ উত্তর মেসিডোনিয়ার চেয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে ছিল কোচ জোয়াকিম লোর দল। নয় মিনিটে লিওন গোরেৎস্কার শটটা ক্রসবারে প্রতিহত না হলে জার্মানরা এগিয়ে যেতে পারত ম্যাচের শুরুতেই। তবে সেটা হয়নি। হয়নি ২৭ মিনিটেও। সের্জ গেনাব্রির শটটা পা দিয়ে রুখে দেন মেসিডোনিয়ান গোলরক্ষক দিমিত্রিভস্কি।
এ পর্যন্ত কিছুটা কোনঠাসা থাকা মেসিডোনিয়া স্বাগতিক গোলরক্ষক মার্ক আন্ড্রে টের স্টেগেনের পরীক্ষা নেয় ৪০ মিনিটে। তবে দারুণ এক সেভে আদেমির হেডার থেকে জার্মানিকে রক্ষা করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক। এর মিনিট পাঁচেক পর অবশ্য আর রক্ষা মেলেনি তার, তার দলের। লেভান্তে মিডফিল্ডার এনিস বারধির বাড়ানো বলে ছয় গজের বক্স থেকে সহজেই গোলটি করেন গোরান পানদেভ, চলতি বাছাইপর্বে যা জার্মানদের হজম করা প্রথম গোলও। তবে ‘ডাই ম্যানশ্যাফটদের’ দুর্দশার আরও অনেক পর্ব বাকি ছিল দ্বিতীয়ার্ধে।
৬৩ মিনিটে ইলকায় গুন্দোয়ানের পেনাল্টি গোল অবশ্য ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ৮০ মিনিটে জশুয়া কিমিখের পাস থেকে গুন্দোয়ান শুধু গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেই জয়টা ধরা দিত জার্মানির হাতে। কিন্তু তা করেননি তিনি, পাস বাড়ান চেলসি ফরোয়ার্ড টিমো ভের্নারকে, যিনি বলে ঠিকঠাক পা ছোঁয়াতেই পারেননি।
গোলের নিশ্চিত সুযোগটা হাতছাড়া করার খেসারত মিনিট পাঁচেক পর দেয় জার্মানরা। দুর্বল কর্নার বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হয় দলটি। এরপর বক্সের ঠিক মাঝামাঝিতে দাঁড়ানো এলজিফ এলমাস জোরালো শটে গোল করেন। ফলে উত্তর মেসিডোনিয়া পায় স্মরণীয় এক জয়, আর জার্মানরা নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হারের বিস্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
- বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে জার্মানির যত হার
প্রতিপক্ষ | ব্যবধান | সাল |
পর্তুগাল | ০-১ | ১৯৮৫ |
ইংল্যান্ড | ১-৫ | ২০০১ |
উত্তর মেসিডোনিয়া | ১-২ | ২০২১ |
এই হারের ফলে তিন ম্যাচ থেকে সমান ছয় পয়েন্ট পেলেও উত্তর মেসিডোনিয়া থেকে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে ইউরোপীয় বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ‘জে’ গ্রুপের তৃতীয় স্থানে আছে জার্মানি। দুইয়ে আছে মেসিডোনিয়া, আর শীর্ষে আছে তিন ম্যাচের সবকটিতে জেতা আর্মেনিয়া।
দিনের অন্য ম্যাচে ‘সি’ গ্রুপে ইতালি জয় পেয়েছে ২-০ ব্যবধানে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোলদুটো করেছেন স্তেফান সেনসি ও কিরো ইমোবিলে। স্পেনও দানি অলমো, ফেরান তরেস ও জেরার্ড মরেনোর গোলে ৩-১ ব্যবধানের জয় পেয়েছে, এর আগের ম্যাচে জর্জিয়ার বিপক্ষে শেষ সময়ের গোলে জয় পেয়েছিল দলটি। ফলে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট অর্জন করে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষেও আছে কোচ লুইস এনরিকের শিষ্যরা। ‘আই’ গ্রুপে দুই হ্যারি, কেইন আর ম্যাগুয়েরের গোলে পোল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে হারায় ইংল্যান্ড, টানা তিন জয়ে আছে গ্রুপের শীর্ষেও। এদিকে অ্যান্টোয়ান গ্রিজমানের একমাত্র গোলে বসনিয়া হার্জেগোভিনার বিপক্ষে কষ্টার্জিত এক জয় পেয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।