যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে আসা হাজার হাজার অভিভাবকহীন শিশু-কিশোর। অন্য সবাইকে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া বা ফিরে যাবার কথা বলা হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনের তরফ থেকে। তবে অভিভাবকহীন শিশু কিশোরদের রাখা হচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার
১৬ বছর বয়সী হোসে লুইস তাদের একজন। লুইস বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিমান, বাসে ভ্রমণ করে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে। উদ্দেশ্য, বাবা-মার সঙ্গে সাক্ষাৎ। তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ইকুয়েডরের সারাগুরো থেকে। হাজার হাজার অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের মতোই একজন সে। এই দীর্ঘ যাত্রায় কেউ তাকে গাইড করতে বা সুরক্ষার কথা বলেনি। লুইস বলেন, আমার মা এবং বাবার সঙ্গে দেখা করাটা, আমার জন্য সবচেয়ে ভালো ঘটনা।
লুইসের বয়স যখন তিন বছর তখন তার বাবা-মা ইকুয়েডর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। হোসে লুইসকে রেখে আসেন তার দাদা-দাদির সঙ্গে।
অভিভাবকহীন অপ্রাপ্ত বয়স্করাই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনার অনুমতিপ্রাপ্ত একমাত্র শ্রেণী। বছরের শুরু থেকে কয়েক হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করেছে। অনেকেই বলেছেন তারা অপরাধ ও সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়েছেন। অনেকেই নিরাপদ ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রত্যাশা করছেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে।
ডিলান কর্পেট, হোপ বর্ডার ইন্সটিটিউট আঞ্চলিক পরিচালক। তার মতে, বাচ্চারা যখন সীমান্ত অতিক্রম করে তখন প্রায়শই তারা সীমান্ত রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ে যায়। বর্ডার প্যাট্রোল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে সুরক্ষা দেয় এবং তাদের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের হেফাজতে সোপর্দ করে।
ওইসব অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কিছু কিছু ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে আলাদাভাবে আচরণ করা প্রয়োজন। বাইডেন প্রশাসন তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে একই আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে তিন দিনের সীমা টেনে দিয়েছে। তারপর তাদেরকে বিশেষ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি বেকি ওলোজিন বলেন, নব্বইয়ের দশকে ফ্লোরস নামে পরিচিত একটি মামলা ছিল, যাতে বাচ্চাদেরকে নিয়মিত অভিবাসন আটক কেন্দ্রে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে রাখার অভিযোগ ছিল। বাচ্চাদের সেখানে দীর্ঘ সময়, কয়েক মাস রাখা হোতো। মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ মূলত কারাগারে বাচ্চাদের রাখার নিয়ম নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক ঘাঁটি, কনভেনশন সেন্টার এবং হোটেল কমপ্লেক্সকে জেমনভাবে জরুরি স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়; বাইডেন প্রশাসন তেমনিভাবেই কিশোর আশ্রয় কেন্দ্রের সুবিধাগুলো প্রসারিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। তদুপরি, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের বাবা মা বা আত্মীয়দের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ঠিকভাবে যত্ন করার কথা বলা হয়েছে।
টনা ব্রাউন বৈথনি ক্রিশ্চিয়ান সার্ভিসেসে গ্লোবাল শরণার্থী এবং অভিবাসী সেবার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। এমন বাচ্চাদের পরিচর্যা করেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, আমরা বাচ্চাদের জন্য সেই পরিষেবা দিতে পারি কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে প্রতিটি শিশু নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার দাবিদার, যতক্ষণ না তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয়।
কিছু আমেরিকান পালক বাবা-মা হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে অভিবাসী বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। কিম এবং জেসন পেনসিলভেনিয়ায় বসবাসকারী ফসটার প্যারেন্ট। তারা বলেন, আমি যখন প্রথমবার তাদের আশ্রয় দেই তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা কতটা আসহায়, তাঁদের সত্যিকার পরিচর্যা দরকার। এখানে আসার পরে আমরা তাদের জন্যে পোশাক কিনি, কারণ সাধারণত, তারা কেবলমাত্র এক পোশাকেই একটি ব্যাগে কিছু জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
করোনা ভাইরাস মহামারির কথা বলে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন আশ্রয় প্রার্থনার সব আবেদন স্থগিত করেছিল। বাইডেন প্রশাসন সেই নীতিটি বলবত রাখলেও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ছাড় দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিলান কর্পেট বলেন, সীমান্ত রক্ষীরা এতো শিশুদের দেখভাল করতে সমর্থ নন; কারণ তাদের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যদিও শিশুদের ৭২ ঘণ্টার বেশি সীমান্ত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখার নিয়ম নেই; কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক শিশুকে অনেক বেশি সময় সেখানে রাখতে হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষীরা তাদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত নয়।
হোসে লুইসের মতো যেসব অভিচাবখিন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মোটামুটিভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করছে, তাদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে অপেক্ষা করছে অনেক নতুন সম্ভাবনা। যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছে লুইস নিজেও, আমার স্বপ্ন হলো পড়াশোনা করা এবং একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়া। আমি অর্থনীতি পড়তে চাই।