জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও কার্বন নিঃসরণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দেশজুড়ে এক হাজার কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি আরব। পাশাপাশি ‘মিডলইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের আওতায় আরবের দেশগুলোতে আরো ৪ হাজার কোটি গাছ লাগানো হবে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শনিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। দেশটির অর্থনৈতিক-সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, তার আওতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
বিবৃতিতে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলকে দ্রুত এবং কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে সৌদি আরব। এ কারণেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা— এ দু’টি বিষয়কে যারা সমন্বয় করতে অক্ষম, সৌদি আরব তাদের দলভূক্ত নয়।’
তবে সৌদি আরব ও আরবের অন্যান্য দেশগুলোতে প্রায় সর্বত্রই মরুভূমির প্রাধান্য দেখা যায় এবং পানির যোগানও সেসব অঞ্চলে খুবই সীমিত। কীভাবে এই বিশাল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে— সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলেননি মোহাম্মদ বিন সালমান।
দেশটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। পানির উৎস অত্যন্ত কম থাকায় দেশে পানির চাহিদা মেটাতে আরবের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবও সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করে পানযোগ্য করে তুলতে বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট পরিচালনা করছে।
আভ্যন্তরীনভাবে সৌদি আরবে যে জ্বালানী তেল ও গ্যাসের ব্যাবহার হয়, তার একটি বড় অংশই ব্যয় হয় বিদ্যুৎ ও পানি লবণমুক্ত করার প্রকল্পে। এ দুটি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে দেশটিতে এবং এর পরিমান দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমাতে চান। ২০৩০ সাল পর্যন্ত দশকব্যাপী যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার, তাতে তেল নির্ভরতা হ্রাস করে দেশের অর্থনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, সম্প্রতি সৌদি আরবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা দেশের অর্থনীতিকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘বিগত দশকগুলোর তুলনায় সৌদি আরবে অনেক দ্রুতহারে মরুকরণ হচ্ছে। ধুলিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে অধিকহারে। শুধু ধুলিঝড়ের কারণে দেশে প্রতিবছর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ১৩ হাজার কোটি ডলার। কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সৌদি নাগরিকদের গড় আয়ু কমেছে প্রায় দেড় বছর।’
সৌদি আরবের সর্ববৃহৎ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম উত্তলন ও পরিশোধন কোম্পানি সৌদি আরামকোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে, গতবছর আরামকোর তেল শোধনাগার ও পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্টগুলো প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিকটন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করেছে, যা ইউরোপের কয়েকটি দেশের সম্মিলিত কার্বন নিঃসরণের সমান।
সূত্র: এএফপি