ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ-বিরতির এক প্রস্তাব এনেছে সৌদি আরব। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়েমেনে চলমান দীর্ঘ ছয় বছরের চলমান যুদ্ধ অবসানের অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সৌদি আরবের যুদ্ধ-বিরতির এই প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘসহ চার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আরব দেশগুলো স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানের অধীনে প্রস্তাবিত এই যুদ্ধ-বিরতি অনুসারে ইয়েমেনের ওপর থেকে সৌদি আরবের সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বন্দরগুলো বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য সচল করা হবে। পাশাপাশি হাউছিদের দখলে থাকা রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বর্হিবিশ্বের সাথে বিমান যোগাযোগের জন্য চালু করা হবে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আশা করবো হাইছিরা এই উদ্যোগের ইতিবাচক সাড়া দেবে, ইয়েমেনিদের রক্তপাত বন্ধ করবে এবং রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ তৈরি করবে।’
সৌদি আরবের এই উদ্যোগকে জাতিসঙ্ঘসহ চার সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনি গুতেরেসের সহকারী মুখপাত্র সৌদি আরবের উদ্যোগকে সংস্থাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে একে স্বাগত জানিয়েছে।
একই সাথে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), আরব লীগ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) সৌদি আরবের প্রস্তাবিত যুদ্ধ-বিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে।
অপরদিকে মিসর, সুদান, জর্দান, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েতসহ অন্য আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক বিবৃতিতে হাউছিদের সাথে সৌদি আরবের যুদ্ধ-বিরতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।
বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।
ছয় বছরের বেশি সময় চলমান এই গৃহযুদ্ধে হাউছি নিয়ন্ত্রিত সানাকেন্দ্রীক উত্তর ইয়েমেন ও বন্দর নগরী এডেনকেন্দ্রীক দক্ষিণাঞ্চলীয় সরকারের অধীন দক্ষিণ ইয়েমেনে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
গত বছর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি মধ্যস্থতায় দক্ষিণের সব শক্তিকে একত্রিত করে নতুন এক ঐক্য সরকার গঠন করা হয়। সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি ও আমিরাতের সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এসটিসিকে একত্রিত করে এই সরকার গঠিত হয়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি