দুই বছরের মধ্যে টানা চতুর্থ দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইসরায়েলে। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পর দেশটিতে আবারও নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
ইসরায়েলিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টি এখনও বেশ জনপ্রিয়। নির্বাচনের আগে সর্বশেষ জনমত জরিপে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি অন্য দলগুলোর তুলনায় বেশ ভালো ভাবে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু এরপরও দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা কম।
কারণ লিকুদ পার্টি জনমত জরিপে এগিয়ে থাকলেও নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর তাই, নির্বাচনের পর দেশটিতে আবারও জোট সরকারকে ক্ষমতায় দেখা যেতে পারে।
এদিকে জনমত জরিপে এগিয়ে থেকেও যেন শান্তিতে নেই নেতানিয়াহু। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসরায়েলিরা। নির্বাচনের মাত্র দু’দিন আগে তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভে নামে হাজার হাজার ইসরায়েলি।
অবশ্য নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। দুর্নীতি ও করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে গত বছরের জুলাই থেকেই দেশটিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। এমনকি কঠোর লকডাউনের মধ্যেও একাধিকবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছিল সাধারণ ইসরায়েলিরা। নির্বাচনের আগে এটা আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
প্রথম কোনো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভে অংশ নেন দেশটির সাধারণ মানুষ। গত বছর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির তিনটি অভিযোগ আনা হয়। তবে বরাবরই তিনি সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এছাড়া নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নেতানিয়াহুর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, এ নিয়ে তার ওপর রাজনৈতিক চাপও রয়েছে।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইউরিয়েল আবুলফের মতে, নির্বাচন পূর্ব জরিপে পাওয়া চিত্রের সঙ্গে বাস্তব ফলাফল খুব বেশি হের ফের হবে না।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলে নির্বাচনের আগে করা জরিপগুলো মূলত সঠিকই হয়ে থাকে। তাই এটা বিশ্বাস করাই যুক্তিযুক্ত যে, ভোটারদের অর্ধেক জোট সরকারের পক্ষে, আর বাকি অর্ধেক না।’
পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবারও ইসরায়েলে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আর এতে দেশটিতে আবারও রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। দেশটির প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলো বলছে, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীন বা বিরোধী জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। যদি তাই হয়, তাহলে কোনো পক্ষই সরকার গঠন করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলে সরকার গঠন করার জন্য ৬১টি আসন প্রয়োজন। কিন্তু জনমত জরিপ অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিসহ কোনো দল বা জোট এতোগুলো আসন পাচ্ছে না।
তবে এতো কিছুর পরও নির্বাচনী জনমত জরিপে নেতানিয়াহু এগিয়ে থাকায় তার দল লিকুদ পার্টি এককভাবে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখতেই পারে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির নির্বাচন ও পরবর্তী ক্ষমতাসীন সরকারের দিকেই নজর রয়েছে গোটা বিশ্বের।