মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বাড়ছে বিটকয়েন এটিএম বুথের সংখ্যা। যেখানে ডিজিটাল মুদ্রা কিনতে ও বিক্রি করতে পারবেন গ্রাহকরা। এমনকি কখনো কখনো কাগুজে নগদ অর্থও নেওয়া যাবে এসব মেশিন থেকে। এটিএম সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা এবং রেমিটেন্স প্রেরণে তথ্য গোপন রাখার জন্যই আগ্রহ বাড়ছে এ মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানায় ধূমপানের দোকানগুলোতে ও ক্যারোলাইনার গ্যাস স্টেশন এবং নিউইয়র্ক সিটির সুদূর কোণে ডিলিসে নতুনভাবে এটিএম বুথ বসানো হয়েছে বিটকয়েন লেনদেনের জন্য। যেখানে গ্রাহকরা ডিজিটাল মুদ্রার সব ধরনের ব্যবহার করছেন।
কয়েনফ্লিপ ও কয়েন ক্লাউডের মতো কিওস্ক অপারেটররা হাজার হাজার এটিএম স্থাপন করেছে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্যই জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
একটি স্বাধীন গবেষণা সাইট হাওম্যানাইবিটকয়েনএটিএমএস ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ হাজার ১৮৫ বিটকয়েন এটিএম ছিল। এরমধ্যে গত পাঁচ মাসে সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার।
এদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি কমপ্লায়েন্স ফার্ম সিফারট্রেসের আর্থিক তদন্ত এবং শিক্ষা পরিচালক পামেলা ক্লেগ বলেন, ফি লেনদেনে মোট লেনদেনের ৬ শতাংশ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অবস্থান এবং বিটকয়েন এটিএম অপারেটরের উপর নির্ভর করে ফি আলাদা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বিটকয়েন এটিএম সংস্থা শুরু করা আসলেই জটিল কিছু নয়। প্রচুর বিটকয়েন এটিএম সংস্থা রয়েছে, তারা লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। তাদের উপার্জনও বাড়ছে এবং অনেকেই আছেন যারা লাভের পরিমাণ বেশি থাকায় এ ব্যবসায় যেতে চান।
যদিও এরইমধ্যে নিউ জার্সি রাজ্য তদন্ত কমিশন ফেব্রুয়ারির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিওস্কে ‘সন্দেহজনক লেনদেন এবং প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার’ শিরোনামে এই উদ্বেগগুলোর কয়েকটি বর্ণনা করেছে। কিন্তু এতসব সমালোচনা বা সন্দেহের মধ্যে এর ব্যবহার একটুও কমেনি।
কয়েন এটিএম রাডারের একটি অনলাইন মানচিত্র অনুসারে, আলাস্কা ছাড়াও প্রতিটি রাজ্যেই এখন বিটকয়েন এটিএম রয়েছে, পাশাপাশি ওয়াশিংটন, ডিসিতে রয়েছে। এছাড়া উত্তর ক্যারোলাইনা, দক্ষিণ ক্যারোলাইনা, গ্রামীণ পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্ক সিটির উপকণ্ঠে গ্যাস স্টেশন, স্টোর এবং রেস্তোঁরাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টো এটিএম সেবা দেখা গেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কমপ্লায়েন্স ফার্ম সিফারট্রেসের আর্থিক তদন্ত এবং শিক্ষা পরিচালক পামেলা ক্লেগ বলেন, অনলাইনে লেনদেনের পরিবর্তে এটিএম ব্যবহারের কারণগুলো ভিন্ন হয়। কেউ নগদে অর্থ প্রদান করেন, কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অভাব রয়েছে, কেউ বিদেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে চান বা নাম প্রকাশ করতে চান না। এসব কারণে বিটকয়েন এটিএমের ব্যবহার বাড়ছে।
লাস ভেগাস ভিত্তিক কয়েন ক্লাউডের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চারপাশে এক হাজার ৪৭০টি মেশিন রয়েছে এবং বছরের শেষের দিকে এসব এলাকায় ১০ হাজার এটিএম থাকবে বলে আশাবাদি সিইও ক্রিস ম্যাকএলারি। যদিও উদ্বেগ ছিল যে, মহামারিটি ব্যবসায় আঘাত করতে পারে।
এদিকে শিকাগোভিত্তিক প্রতিযোগি কয়েনফ্লিপ এটিএম এর সংখ্যা গত বছরের ৪২০ থেকে বাড়িয়ে এখন এক হাজার ৮০০ করেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সিইও ড্যানিয়েল পোলটস্কি।
তিনি বলেন, কিছু মেশিন কেবল বিটকয়েন সরবরাহ করে, অন্যরা গ্রাহকদের বিভিন্ন ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে দেয়। কয়েকটি বিটকয়েন এটিএম আসলে নগদ অর্থও দেয়। কয়েনফ্লিপ গ্রাহকদের ক্রিপ্টো কিনতে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং বিক্রয়ের জন্য ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে চার্জ দেয়।
অন্যদিকে আটলান্টাভিত্তিক বিটকয়েন ডিপো একইভাবে তাদের এটিএমগুলোর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮০০ তে। এমনটাই জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সিইও ব্র্যান্ডন মিন্টজ। তিনি বলেন, বিটকয়েন এটিএম গ্রাহকের বেশিরভাগই ২৫-৪০ বছর বয়সী।
এদিকে বিটকয়েন এটিএম তৈরিকারক জেনারেল বাইটসের তথ্য মতে, গত গ্রীষ্মে চাহিদা বাড়ার সাথে সাময়িকভাবে স্টক বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া গত বছর বিক্রি করা তিন হাজার মেশিনের মধ্যে উত্তর আমেরিকায় গিয়েছিল ৯০ শতাংশ মেশিন, এমনটা জানান আরেক প্রতিষ্ঠাতা কারেল কিভস্কি। এছাড়া অনেক এলাকায় বিটকয়েন এটিএম শুধু কিছু চালক ব্যবহার করায় তা গুটিয়ে নিতেও হয়েছে বলে তিনি জানান।