আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে দেশটির জনসাধারণের বিক্ষোভের ১০ম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে সোমবার। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়াজুড়ে প্রেসিডেন্ট আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভকে সশস্ত্র উপায়ে দমনের পদক্ষেপ নেয়া হলে দেশটিতে এক দশকের চলমান গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ১০ বছর যুদ্ধে দেশটি বিধস্ত হলেও ইরান ও রাশিয়ার সামরিক সহায়তায় আরব বসন্তের বিক্ষোভে একমাত্র টিকে থাকা একনায়ক হিসেবে এখনো ক্ষমতায় রয়েছেন বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধে দেশটি অপরিমেয় ক্ষতি ও ধ্বংসের কবলে পড়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ লোক যুদ্ধে নিহত হওয়ার সাথে সাথে যুদ্ধপূর্ব দুই কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেক অংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে ৫০ লাখের বেশি সিরীয় নাগরিক দেশটি ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সিরিয়ার হিমস প্রদেশ থেকে আসা আশরাফ আল-হিমসি এক শরণার্থী আলজাজিরাকে বলেন, ২০১১ সালে সরকার বিক্ষোভকারীদের সশস্ত্র পন্থায় নামতে বাধ্য করে।
তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের বাধ্য করে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে এবং বিক্ষোভকে যুদ্ধে রূপান্তরিত করতে…আমাদের স্লোগান নিয়ে বন্দুকের মুখোমুখি হওয়া আর সম্ভব ছিল না।’
যুদ্ধের জেরে লাখ লাখ মানুষ দেশটিতে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ পরিবারই জানে না, তাদের পরের বেলার আহার জুটবে কি না।
সিরিয়ায় আরব বসন্তের জন্মভূমি দারা শহরটি ২০১৮ সাল থেকেই আসাদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিরীয় অ্যাকটিভিস্ট মায়সুন আল-মাসরি আলজাজিরাকে বলেন, দারায় সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর পতাকা উত্তোলনের ছবি দেখে তিনি প্রায় ভেঙে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘শহরটি বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিল। আমাদের স্বপ্নকে ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।’
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি অর্থনৈতিক দুর্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও বিভক্ত রয়েছে।
তুরস্ক সীমান্তে ইদলিব প্রদেশে তুর্কি সমর্থন নিয়ে আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা এখনো তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
অপরদিকে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধারা উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সিরিয়ার এক-চতুর্তাংশ ভূমি দখল করে আছে। দেশটির বাকি অংশ আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
যুদ্ধের মধ্যেও সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সিরীয় নাগরিকদের অসহনীয় অর্থনৈতিক দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে সক্ষম হয়েছেন বাশার আল-আসাদ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাগরিকরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়লেও সরকার জ্বালানি, ওষুধ ও অন্য জরুরি সরবরাহ চালু রেখেছে।
ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় বর্তমানে আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশ থেকেই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটিতে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিরোধীদের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
কিন্তু ভয়াবহ গতিতে ভেঙে পড়ছে সিরিয়ার অর্থনীতি। গত বছর দেশটিতে আরোপ করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সাথে সাথে বর্হিবিশ্ব ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টিকারী লেবাননের অর্থনৈতিক ধস এই অবস্থাকে আরো শোচনীয় করে তুলেছে।
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বর্তমানে ৮০ ভাগের বেশি সিরীয় নাগরিক দরিদ্র অবস্থায় রয়েছে এবং ৬০ ভাগ ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সিরিয়ার মুদ্রার মানও ক্রমাগতভাবে কমছে। কালোবাজারে বর্তমানে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে চার হাজার সিরীয় পাউন্ড বিনিময় করা হচ্ছে। গত বছর বিনিময়ের এই হার ছিল এক ডলারে সাত শ’ পাউন্ড। ২০১১ সালে যুদ্ধের শুরুতে এক ডলারে ৪৭ সিরীয় পাউন্ড পাওয়া যেতো।
সূত্র : আলজাজিরা