পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোড়জোড় চললেও ইরানের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো মেনে না নেয়া পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অচলাবস্থা কাটবে না বলে মন্তব্য করেছে ইংরেজি নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভি। এই গণমাধ্যমটি এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলেছে, পরমাণু সমঝোতা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার ব্যাপারে ইউরোপীয়দের সঙ্গে নয়া মার্কিন প্রশাসনের কোনো পার্থক্য খুঁজে পায়নি ইরান।
সম্প্রতি তিন ইউরোপীয় দেশ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাসের চেষ্টা করলে তেহরান হুমকি দিয়ে জানায়, ওই প্রস্তাব পাস হলে সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে ইরানের তিনমাসের যে অস্থায়ী চুক্তি হয়েছে তা বাতিল করা হবে। ইরানের ওই হুমকির মুখে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি আইএইএ’তে ইরানবিরোধী প্রস্তাব উত্থাপন থেকে সরে আসে।
প্রেসটিভির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মার্কিন সরকারও ইরানের ওপর থেকে ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নিজের অনাপত্তির কথা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে বিদেশে আটকে পড়া ইরানের অর্থ ক্রমান্বয়ে ছাড়িয়ে আনতে দিতে সম্মত হয়েছে আমেরিকা। কিন্তু জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কিংবা গোপন কোনো বৈঠকে না বসে এই ছাড় দিতে রাজি নয়।
প্রেসটিভি আরো জানায়, ইউরোপীয়রা এবার পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ‘ধাপে ধাপে’ নামক পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। তারা প্রকৃতপক্ষে ইরানের হুমকির মুখে আইএইএ’তে ইরানবিরোধী প্রস্তাব উত্থাপন না করলেও এখন দাবি করছে, নিজেদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে তারা ওই কাজ থেকে সরে গিয়েছিল। কাজেই এবার তারা ‘ধাপে ধাপে’ পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করার যে পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে তা ইরানকে মেনে নিতে হবে।
ইউরোপীয় দেশগুলো অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একথা বলতেও দ্বিধা করছে না যে, তারা পরমাণু সমঝোতাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তারা এখন বলছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেআইনিভাবে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের তেল বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তা প্রত্যাহার করার জন্য তেহরানকে অবশ্যই ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
প্রেস টিভি আরো লিখেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ইরানের তেল বিক্রির আটকে পড়া ৭০০ কোটি ডলার থেকে ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে আনার বিষয়টিতেও প্রথমে সম্মত হয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু ইরান যখন তার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা একবারে প্রত্যাহারের দাবিতে অটল থাকে তখন ওই ১০০ কোটি ডলারের ব্যাপারেও ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানায় মার্কিন সরকার।
প্রতিবেদনে ইরানের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলা হয়, ইরানের ঘোষিত নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় বসা যাবে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত ৮ জানুয়ারির ভাষণে যেসব শর্ত দিয়েছেন পাশ্চাত্য সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলেই কেবল তেহরানের সহযোগিতা পাবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, তার দেশ পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের মাত্রা আগে কমাতে শুরু করেনি বরং আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই সামগ্রিক অচলাবস্থার সূচনা হয়েছে। কাজেই পাশ্চাত্য যদি পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবিত করতে চায় তবে আমেরিকাকে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। আর সেটা শুধু মুখে বললে হবে না বরং কাজে প্রমাণ করতে হবে। কার্যকরভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি উপলব্ধি করার পরই ইরান পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতিতে পুরোপুরি ফিরে যাবে।