কক্সবাজারের সাথে তুলনা করলে ভাসানচর দ্বীপটি রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার পক্ষে আরও নিরাপদ ও জীবনযাপনের জন্য আরও সুবিধাজনক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গা স্থানান্তরকে সমর্থন করা উচিত এবং মিয়ানমারকে তার লোকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত স্টাডিজ বিভাগ ও সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (সিএফআইএসএস) এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর : সুবিধা এবং প্রতিকূলতা নামক একটি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ডা. আ স ম মকসুদ কামাল, প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এবং সিএফআইএসএস কমডোর (অব।) এমএন আবছার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদিকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ।
রোহিঙ্গারা গবেষণার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল জানিয়ে প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য যে বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে তা তাদের জন্য সুবিধাজনক এবং সবকিছু বিবেচনা করলে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ একটি জায়গা।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ উপাচার্য (শিক্ষা) বলেন, ব্যস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর সত্যিই এটা মানবিক পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সহায়ক হবে।
তিনি এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পদায়কে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারের জান্তা সরকারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান কমোডর এম. এন. আবসার, এনডিসি, পিএসসি, এনজিপি, বিএন (রিটায়ার্ড) বলেন, অনেক রোহিঙ্গা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাসানচরে আসছে। আমারদের উচিত সকল রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে আসা।
তিনি আরও বলেন, আশা করি এই অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ভাসানচর হবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল যা তাদের নিরাপত্তার সাথে জীবন পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করবে।
সেমিনারে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সুবিধা এবং প্রতিকূলতার বিষয়ে করা গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে জানান, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত, সেখানে অপ্রতুল বাসস্থান এবং চিকিৎসাসেবা, অপ্রতুল আয়-রোজগারের ব্যবস্থা এবং রান্নাঘর ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ঘাটতি। এছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষার ব্যবস্থা। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরো ক্যাম্পের এলাকা জুড়ে সমানভাবে নেই। ফলে ক্যাম্প এলাকাটি দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের তুলনায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অবহেলিত মনে করছে। ফলে তাদের সাথে রোহিঙ্গাদের দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র, পতিতাবৃত্তি, মানব পাচার এবং মাদকের বিস্তার ও কেনাবেচার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এদিকে তুলনামূলকভাবে ভাসানচর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ একটি জায়গা। দ্বীপটিতে আধুনিক সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে, আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপটিতে যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং মাবনবাধিকারের নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ভাসানচরের অবস্থার উন্নতির জন্য আরও অনেক ব্যবস্থা চলমান আছে বলে জানানো হয়।