পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে ইরান শিগগিরই ‘গঠনমূলক পরিকল্পনা’ সামনে আনবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। পরমাণু ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তেহরান রাজি হয়েছে বলে ইউরোপীয় সূত্রগুলো জানানোর পর শুত্রবার (৫ মার্চ) এ মন্তব্য করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে জাভেদ জারিফ বলেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এবং একইসঙ্গে প্রধান পরমাণু আলোচক হিসেবে যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে শিগগিরই আমাদের গঠনমূলক পরিকল্পনা পেশ করবো।’
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রোসি সাংবাদিকদের জানান, ইরান তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সের একটি কূটনৈতিক সূত্র ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাও বৃহস্পতিবার একই তথ্য জানান বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ইরানের সিদ্ধান্তের পেছনে জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এ সপ্তাহেই জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা ছিল এই তিনটি দেশের। কিন্তু আপাতত তা স্থগিত করা হয়েছে। তারপরেই মূলত সুর নরম করল তেহরান।
অবশ্য গত কিছুদিন ধরে আলোচনার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে ছিল ইরান। তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে পরমাণু চুক্তি নিয়ে কোনোরকম আলোচনায় বসবে না বলেও দাবি করে আসছিল দেশটি। এর পাশাপাশি ইউরেনিয়ামের মজুত অনেকগুন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইরানি পার্লামেন্ট। পাশাপাশি দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে আইএইএ’র বিশেষজ্ঞদের নজরদারিও বন্ধ করে দেয় দেশটি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিন্দাপ্রস্তাব গ্রহণ করার কথা ছিল জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের। জার্মানির বক্তব্য, ইরান যেভাবে এগোচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত আলোচনায় বসা দরকার। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপরই আলোচনার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয় ইরান।
আলজাজিরা জানিয়েছে, পরমাণু ইস্যুতে তেহরানের নীতি কী হবে- সে বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বা সরকার নয়; সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী হোসেইনি খামেনি। আর এ কারণে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘প্রয়োজন মনে করলে’ ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তবে মুখে একথা বললেও মূলত পরমাণু চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে পশ্চিমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পাঁচ বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায় এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরমাণু চুক্তিতে আবারও ফেরার ব্যাপারে আগ্রহী হয় ওয়াশিংটন ও তেহরান।
সূত্র: আলজাজিরা