আইসল্যান্ডের মতো ভূমিকম্পে অভ্যস্ত একটি আগ্নেয় দ্বীপের জন্যও গত সপ্তাহ ছিল এক অস্বাভাবিক সপ্তাহ। আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য মতে, গত সপ্তাহে দেশটির রেইকজানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হেনেছে প্রায় ১৭,০০০ ভূমিকম্প!
এর মাঝে ৫.৬ রিখটার স্কেলের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি ঘটে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে। যা নিকটবর্তী রাজধানী রেইকজাভিক এবং এর আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের নাড়া দেয়, যেখানে বসবাস করে আইসল্যান্ডের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
এছাড়াও ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ সেখানে আঘাত হানে ৫.০ চেয়েও বেশি রিখটার স্কেলের আরও দুটি ভূমিকম্প।
এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি নয়, যদিও আইসল্যান্ডের সড়ক ও উপকূলীয় প্রশাসন জানিয়েছে যে ভূমিকম্প আঘাত হানা এলাকার রাস্তায় ছোট খাটো ফাটল দেখা দিয়েছ।
রেইকজাভিকের বাসিন্দা আউউর আলফা ওলাফসদোত্তির সিএনএনকে বলেন, “আমি এর আগেও ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছি কিন্তু কখনও এমন লাগাতার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা হয়নি।
“সারা সপ্তাহ ধরে পৃথিবী দিনে ২৪ ঘণ্টা কাঁপতে পারে এটা অনুভব করা খুবই অস্বাভাবিক। এটা আপনাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে খুব ক্ষুদ্র এবং শক্তিহীন করে তোলে।”
আইসল্যান্ডের অবস্থান টেকটনিক প্লেটের এমন এক সীমানায় -যা ক্রমাগত বিভক্ত হতে থাকে, যা মধ্য আটলান্টিক রিজের রেখা বরাবর উত্তর আমেরিকা এবং ইউরেশিয়াকে একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরিবিজ্ঞানের অধ্যাপক অরভালদুর ওরসন বলেছেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বোধগম্য। “অবশ্যই এটা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে। এই অঞ্চলের জন্য, এটা আসলে মোটামুটি অস্বাভাবিক, ভূমিকম্পের ধরন বা তাদের তীব্রতার কারণে নয়, বরং তাদের সময়কালের জন্য। যা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই মুহূর্তে ‘কেন?’ এর সাথে লড়াই করছি। এটা কেন হচ্ছে?”
এলাকায় একাধিক আগ্নেয়গিরি থাকায় স্থানীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন- যেকোনো সময় শুরু হতে পারে অগ্ন্যুৎপাত।
আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরি এবং প্রাকৃতিক হ্যাজার্ড গ্রুপের সাম্প্রতিক মডেল অনুসারে- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় লাভা প্রবাহের ঝুঁকি নেই।
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তরের প্রাকৃতিক ঝুঁকি বিশেষজ্ঞ এলিসাবেত পালমাদোত্তির সিএনএনকে বলেন, কর্তৃপক্ষ জিপিএস এবং ভূমিকম্প মনিটর থেকে শুরু করে ওয়েব ক্যামেরা ও গ্যাস ডিটেক্টর পর্যন্ত সকল নজরদারি সরঞ্জাম মোতায়েন করছে ভূমিকম্প বেশি হওয়া এলাকায় ।
তিনিও মনে করতে পারছেন না এত দীর্ঘ সময় ধরে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা তার আগে কখনো হয়েছে কিনা। তিনি সতর্ক করেছেন যে আরো ভয়াবহ ঘটনা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, এবং অনুমান করেন যে এই এলাকায় ৬ মাত্রার ভূমিকম্প বা তার বেশী মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
আগ্নেয়গিরিবিদ আরমান হসকুলডসন সিএনএনকে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে বলা যায়, কোন প্রধান শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পথে নেই। যদিও রাজধানী রেইকজাভিকের সাথে বিমানবন্দরের সংযোগকারী প্রধান সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিছু পাওয়ারলাইন।
একটি বড় অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কা ২০১০ সালে ইজাফজালাজোকুল অগ্ন্যুৎপাতের কথা স্মরণ করি দেয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ার ট্রাফিক শাটডাউনের সৃষ্টি করে।
কিন্তু পালমাদোত্তির বলেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে একই ধরনের ছাইয়ের স্তুপ তৈরি হবার সম্ভাবনা কম।
বুধবার বিকেলে রাজধানী থেকে মাত্র ২০ মাইল দক্ষিণে কেইলির আগ্নেয়গিরির কাছে একটি কম্পনের ফলে কর্তৃপক্ষকে ঐ এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করছে। আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তর তাদের ওয়েবপেজে বলেছে যে- এর আগেও একই ধরনের পরিস্থিতি ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে।
আইসল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট ফর সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট-এর চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ভিয়ের রেইনিসন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা বেশি। ১২ শতকের পর যা এই এলাকায় প্রথমবারের মতো হবে।
আপাতত দেশটির বাসিন্দারা অগ্ন্যুৎপাতের লক্ষণের অপেক্ষায় আছে, কেউ কেউ কৌতূহলী, বেশিরভাগই উদ্বিগ্ন। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ভিকুরফ্রেত্তির কিলিরের দিকে নির্দেশ করে একটি ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করেছে, অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলে যা লাইভস্ট্রিমিং শুরু করবে।
- সূত্র- সিএনএন