জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে চাকরি পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) দুই ব্যক্তি। তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সদস্য মারুফ কম্পিউটার অপারেটর পদে ও জনি হোসেন অফিস সহায়ক পদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (অস্থায়ী) নিয়োগ পেয়েছেন। মঙ্গলবার (২ মার্চ) দ্বিতীয় কর্মদিবসে কাজ করেছেন তারা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের একটি সংগঠনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের বাস্তবতার করুণ চিত্র তুলে ধরেন তারা। তাদের করুণ জীবনযাপনের কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে দুজনের চাকরির ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
ডিসির দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোমবার (১ মার্চ) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন মারুফ ও জনি হোসেন।
মারুফ মহানগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকার কামালের ছেলে ও জনি হোসেন কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার মুনতাজ শাহের ছেলে। মারুফ ২০১৯ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। জনি হোসেন অষ্টম শ্রেণি পাস। নিজ নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের দুজনকে নিজ কার্যালয়ে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাকরি প্রাপ্ত দুজন হিজড়া যতদিন পর্যন্ত সরকারিভাবে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত না হবেন, ততদিন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাসিক একটি সম্মানি ভাতা তাদের দেয়া হবে। ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার তারা নিজ নিজ পদে যোগদান করেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর দুজনকে চাকরির ঘোষণা দিয়েছিলাম। সোমবার তারা যোগদান করেছেন। রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গ শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের ধীরে ধীরে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ তারাও মানুষ, তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। পরিবার ও সমাজচ্যুত করে তাদের কোনোভাবেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না।
তিনি আরো বলেন, আমার মতো অন্যদেরও উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা। তাদের হেয় প্রতিপন্ন না করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া। সমাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক আছে যাদের জনবল প্রয়োজন। আমি আশা করি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও চাকরির সমান সুযোগ দেবেন।