সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশনায় সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসার পর ঐতিহাসিকভাবে মিত্র এই দেশটির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। রোববার সৌদির একাধিক কলাম লেখক যুবরাজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, সৌদি আরবের সার্বভৌমত্ব শেষ সীমায় পৌঁছেছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দুই বছরের বেশি সময় আগের তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুক্রবার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে আছেন যুবরাজ বিন সালমান।
ওয়াশিংটনের প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ-পরিবারের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা অথবা আটক করতে অভিযান চালানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন যুবরাজ। তার অনুমোদনেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
সৌদি আরবের স্থানীয় দৈনিক আল জাজিরাহ-তে এক নিবন্ধ লিখেছেন দেশটির সাংবাদিক খালেদ আল-মালিক। তিনি বলেছেন, কৌশলগত আঞ্চলিক মিত্রকে শাসানোর অধিকার নেই আমেরিকার।
যুবরাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদির নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে অনীহা জানালেও নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার তিনি এই প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজের মন্তব্য গণমাধ্যমে জানাবেন বলেও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মালিক বলেছেন, প্রতিরক্ষার জন্য সৌদি আরব অনেকাংশে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ২০১৯ সালে তেলের বিশাল অবকাঠামোতে হামলার পর অস্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীন এবং রাশিয়ার দিকে নজর দিতে পারতো রিয়াদ। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের কথা উল্লেখ করে সৌদির এই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘কিন্তু ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক এবং সাধারণ লক্ষ্যের কারণে আমেরিকাকে বেছে নিয়েছে সৌদি।’
সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তার প্রশাসন সোমবার সৌদি আরবের বিষয়ে একটি ঘোষণা দেবে।
এদিকে, লন্ডনভিত্তিক সৌদি মালিকানাধীন দৈনিক আশরাক আল-আওসাতে লেখা এক নিবন্ধে আব্দুল্লাহ আল-ওতাইবি বলেছেন, ওয়াশিংটনের পুরোনো আরব মিত্র সৌদি কোনও ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ নয় যে, কারও হুমকিতে কেঁপে উঠবে।
এর আগে, বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের সরকারি বিবৃতিতে একদল দুর্বৃত্ত জামাল খাশোগিকে হত্যার মাধ্যমে জঘন্য অপরাধ করেছেন বলে জানানো হয়। এই অপরাধে দেশটির একটি আদালত গত বছর অন্তত ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
সৌদি দৈনিক ওকাজে লেখা এক নিবন্ধে সাংবাদিক ফাহিম আল-হামিদ বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত-গভীর সম্পর্ক জোরদার করতে চাই। কিন্তু সেটি আমাদের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নয়। আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের সিদ্ধান্ত এখন চূড়ান্ত বিপদ সীমায় পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সৌদি আরবের অনেক নাগরিক টুইটারে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখেছেন, আমরা সবাই মোহাম্মদ বিন সালমান।