যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সৌদি আরব এবং দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিষয়ে সোমবার তার প্রশাসন সিদ্ধান্ত জানাবে। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘হত্যার অনুমোদন’ দিলেও সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) একথা বলেন তিনি।
এর আগে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও দেশটির প্রকৃত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘হত্যার অনুমোদন’ দিয়েছিলেন বলে শুক্রবার প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের মিত্র এই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুবরাজ সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি দেশটি।
এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বাইডেন প্রশাসন। বিশেষ করে যুবরাজ সালমানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় না আনায় প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল।
পরে শনিবার যুবরাজ সালমানকে শাস্তির আওতায় আনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘সৌদি আরবের ব্যাপারে আমরা কী করতে যাচ্ছি; এ বিষয়ে সোমবার (১ মার্চ) সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।’
বাইডেন এর বেশি আর কিছু বলেননি। এর আগে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার দায়ে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাইডেন প্রশাসন। দেশটির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া দেশটির রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই বাহিনী।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সৌদি আরবের এসব নাগরিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আমেরিকানরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না।
সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ জন সৌদি নাগরিকের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা দেশগুলোকে শায়েস্তা করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যেসব সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শুধু তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে দেশটির এজেন্টদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ছিলেন সৌদি সরকারের বিভিন্ন নীতি ও রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক।
ক্ষমতায় আসার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে শুরুর ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেওয়া বিভিন্ন নীতির অংশ হিসেবেই এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
পূর্বসূরি ট্রাম্পের নীতি বদলে বাইডেন প্রশাসন খাশোগি হত্যার দায়ে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের অন্যতম ঘনিষ্ট মিত্র সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কাজের সম্পর্কের কারণে যুবরাজ সালমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছিলেন বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।
তবে ক্রমবর্ধমান চাপ আর সমালোচনার কারণে সোমবারের নতুন ঘোষণার মাধ্যমে দেশটির এই ক্রাউন প্রিন্সও হয়তো শাস্তির আওতার বাইরে থাকছেন না। অন্তত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উত্তর সেটাই বলছে।
সূত্র: রয়টার্স