করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পর্তুগালে ঘোষিত জরুরি অবস্থা ও লকডাউন আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় ১১ মার্চের পর থেকে লকডাউন ও জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। মহামারীর এই ঢেউ লেগেছে ইউরোপের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় দেশ পর্তুগালেও। পর্তুগিজ সরকার করোনার প্রথম ধাপ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে।
পর্তুগাল সরকার ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ক্রিসমাস ও নতুন বছর উপলক্ষে করোনার বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে। ফলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ ১০ হাজার, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। দৈনিক মৃতের সংখ্যা চলে যায় তিন শ’র ওপরে। হাসপাতালগুলোর সামনে অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘলাইন দেখা যায়। প্রত্যেকটি হাসপাতালে অক্সিজেন ও রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয় যে পর্তুগালকে নিয়ে পুরো ইউরোপ উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। সাহায্যর হাত বাড়িতে দেয় জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ ও প্রতিবেশী দেশ স্পেন। সরকার বাধ্য হয়ে নতুন বছরে ১৫ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে জরুরি অবস্থা ও লকডাউন ঘোষণা করে। যা আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। লকডাউনের বিধিনিষেধ আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পর্তুগাল সরকার এখন পর্যন্ত ১২ বার জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
তবে আশার কথা হলো বর্তমান জরুরি অবস্থা ও লকডাউনের ফলে করোনা পরিস্থিতি বেশ উন্নতির দিকে। দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা নিম্নমুখী। এক মাস আগেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত দেশের তালিকায় শীর্ষের দেশগুলোর একটি ছিল পর্তুগাল। আজ তা নেমে এসেছে ১৩তম স্থানে। তবে এখনো আক্রান্তদের অধিকাংশ আইসিইউতে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখনই লকডাউন তুলে নেয়া হবে ‘বোকামি’। তবে হ্যাঁ, আমরা আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছি এবং এটা ধরে রাখতে হবে। তবে যুক্তরাজ্যের নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে এখনো আমরা উদ্বিগ্ন। আগামী ১১ মার্চ কিভাবে লকডাউন ধীরে ধীরে তুলে নেয়া যায় তার পরিকল্পনা আমি জাতীর সামনে পেশ করবো।’
পর্তুগালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসে নতুন সংক্রমণ ছিল ১ হাজার ২৭ জন ও মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন। একই সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৭৮০ জন। গত বছর মার্চ থেকে শুরু হওয়া মহামারিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ হাজার ২৪৩ জন আর আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ২ হাজার ৭৭৩ জন। অপর দিকে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪৯৩ জন।