আকসুম, ইথিওপিয়ায় একটি শহর। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার। এর মধ্যে ৭ হাজারেরও বেশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, সেই শহরে মুসলিমদের জন্য কোনও ধরনের মসজিদ নির্মাণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মুসল্লিরা নামাজ পড়েন রাস্তায়।
তবে স্থানীয় মুসলিমরা এমন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার জন্য অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন একদল মুসলিম। তবে খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতারা এখনও তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।
তারা মুসলিমদের আহ্বান ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করে বলছেন- আকসুমে মসজিদ নির্মাণ হলে খ্রিষ্টানদের জন্য মৃত্যুই হবে শ্রেয়।
খ্রিষ্টানদের সিনিয়র ধর্মীয় নেতা গডেফা মেরহা জানান, আকসুম তাদের কাছে মক্কা। তাদের বিশ্বাস ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোতে যেমন গির্জা নিষিদ্ধ, তেমনি আকসুমেও কোনও মসজিদ থাকতে পারে না।
গডেফা বলেন, ‘আকসুম একটি পবিত্র স্থান। সিটি অব মনেস্ট্রি। এখানে কেউ যদি মসজিদ নির্মাণ করতে আসেন তাহলে আমরা মরব। কখনোই এটা মেনে নেয়া হবে না। আমাদের জীবদ্দশায় মুসলিমদের এ আবেদন আমরা অনুমোদন করবো না।’
এদিকে ‘জাস্টিস ফর আকসুম মুসলিম’ এই ব্যানারে একদল মুসলিম শহরটিতে দিনের পর দিন মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, মসজিদ নির্মাণ ও প্রার্থনার সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার।
ইতিহাস বলে, ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় অমুসলিম শাসকদের অত্যাচারে পালিয়ে প্রথম মুসলিমরা এসেছিল আকসুম শহরে। তৎকালীন খ্রিষ্টান রাজা সে সময় তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন।
মূলত আরব উপত্যকার বাইরে এটাই ছিল মুসলিমদের প্রথম কোনও উপস্থিতি। বর্তমানে আকসুমের ৭৩ হাজার অধিবাসীর শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থোডক্স খ্রিষ্টান, ১০ ভাগ মুসলিম, আর ৫ ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মের অন্য ধারার অনুসারী।
এমতাবস্থায় আকসুমের কিছু কিছু মুসলিমও মনে করেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য এই আন্দোলন অর্থহীন। কারণ প্রাচীন এ শহরটি অনাদিকাল থেকেই ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য সুবিদিত।
২০ বছর ধরে আকসুমের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক আজিজ মোহাম্মদ বলেন, ‘আকসুমে মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা মিলেমিশে বসবাস করি। ওদের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক।
আমাদের কোনও কাজে ওরা কখনও বাধা দেয় না। তবে বহু বছর ধরেই আমরা রাস্তায় নামাজ পড়ি। আমাদের জন্য একটি মসজিদ হলে খুবই ভালো হয়।’
সূত্র : আরাবিয়ান বাংলা