গত সপ্তাহে জাপানের প্রচারমাধ্যমে নারীদের সম্পর্কে অসংবেদনশীল মন্তব্য ফাঁস হওয়ার প্রেক্ষিতে টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের প্রধান ইয়োশিরো মোরি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে জাপানের পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকে।
গত সপ্তাহে অলিম্পিক বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সভায় মোরি বলেন, ‘বোর্ড মিটিংয়ে নারী বেশি থাকলে মিটিং করতে সময় বেশি লাগে,’ কারণ ‘নারীরা যেন এক প্রতিযোগিতার ভেতর থাকে- যদি একজন নারী সদস্য কথা বলার জন্য হাত তোলে, তখন অন্যদেরও মনে হয়- তাদেরও কথা বলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি নারীদের সদস্যপদ বাড়াতে চান, তাহলে বিপদে পড়ে যাবেন, যদি না (তাদের জন্য) সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন।’
পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৮৩ বছর বয়সী সাবেক এই জাপানি প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন, বন্ধ দরজার পেছনে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তবে এজন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।
টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রেস অফিস সিএনএনকে জানিয়েছে, তারা এই পর্যায়ে মোরি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
মোরির বিষয়ে আগামীকাল শুক্রবার টোকিওতে কাউন্সিল ও নির্বাহী বোর্ডের সদস্যদের একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান মোরি এর আগে বলেছিলেন, তিনি পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করছেন না; তবে জনগণের ক্রমাগত ক্ষোভ তাকে গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
জাপানি নারীরা নিয়মিত লৈঙ্গিক বৈষম্যের মুখোমুখি হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২০ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে লৈঙ্গিক বৈষম্য ‘এখন পর্যন্ত সকল উন্নত অর্থনীতির দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।’
ওই প্রতিবেদনে ১৫৩টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২১।
দেশটিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বোর্ড সদস্যদের মাত্র ৫.৩% এবং সংসদে মাত্র ১০% সদস্যপদ রয়েছে নারীদের, যা বিশ্বের নারী রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের সর্বনিম্ন স্তরের একটি।
মোরির পদত্যাগের পর আগামী ২৩ জুলাই অলিম্পিক শুরু করার জন্য আয়োজক কমিটিকে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।
বলে রাখা ভালো, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক স্থগিত করা হয়; বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই আয়োজন আবারও স্থগিত করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
জাপানের নেতারা প্রতীজ্ঞা করেছেন, জনগণের বিরোধিতা ও ক্রমবর্ধমান বাড়তি খরচ সত্ত্বেও অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। গত মাসে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে’র এক জরিপে দেখা যায়, জাপানের ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন আসন্ন টোকিও অলিম্পিক বাতিল করা, নয়তো আরও পিছিয়ে দেওয়া উচিত।
রোগীর ভারে ধীরে ধীরে নুয়ে পড়ছে জাপানের চিকিৎসা ব্যবস্থা, যদিও উন্নত বিশ্বে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি হাসপাতালের শয্যা রয়েছে এ দেশেই। গত দুই মাসে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৪ লাখ ৬ হাজারে পৌঁছেছে, যা একেবারে খাঁদের কিনারে নিয়ে গেছে জাপানের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে।
৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ৮ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী দেশটির ১০টি জেলায় আপেক্ষমান ছিলেন একটি আইসোলেশন সেন্টার অথবা হাসপাতালে জায়গা পাওয়ার জন্য।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, আগের সপ্তাহে ১১টি জেলাজুড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি করোনা আক্রান্ত লোক ছিলেন একই ধরনের অপেক্ষায়।
সূত্র: সিএনএন