মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস সেক্টরে ভালো করছে। এখানকার শ্রমিকরা আন্তর্জাতিক মার্কেটে যে কোনও পণ্য গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি করতে পারে সেটা আবারও প্রমাণ হল। আমরা ৬.৫ বিলিয়ন পিপিই এখান থেকে অর্ডার নিয়েছি, ভবিষ্যতে আরও সুযোগ থাকবে। এতে বাংলাদেশ-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে, আরও সুদৃঢ় হবে।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বেক্সিমকোর নতুন পিপিই পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, বেক্সিমকোর এই প্ল্যান্টটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করবে। সাম্প্রতিক সময়ের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিবছর আমেরিকায় ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন পণ্য রপ্তানি করে, যা বিগত দশকের তুলনায় দ্বিগুণ। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে যথোপযুক্ত হওয়ায় আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য চারগুণ বেড়েছে।
মিলার বলেন, ‘আমরা উভয় জাতিই দেশের উন্নয়নে বাণিজ্য ও স্বাধীন উদ্যোগের মূল্য সম্পর্কে সাধারণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করি। বেক্সিমকো এই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।’
বেক্সিমকোর সিইও এস নাভেদ হুসাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ঔষধ প্রধান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এছাড়াও ইণ্টারটেলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সন্দ্বীপ দাস, উত্তর আমেরিকার গ্লোবাল সফটলাইসেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রক করোনা, উত্তর আমেরিকার পিপিই কারিগরি প্রধান জ্যাশন আ্যালেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সাভারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) উৎপাদন কেন্দ্রটি। প্রায় ২৫ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই পিপিই পার্ক। বাড়তি চাপ সামলাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের সংমিশ্রণে মাত্র ছয় মাসে সকল অনুমতিসহ উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলা হয় কারখানাটি। এখানে কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন ওজনের লেমিনেটেড ফেব্রিক্স ও মেল্টব্রোন পদার্থ তৈরি হবে।
এই উৎপাদন কেন্দ্রে আরও প্রস্তুত করা হবে- জীবাণুমুক্ত ডিজপজেবল আইসোলেশন ও সার্জিক্যাল গাউন, পুনঃব্যবহারযোগ্য আইসোলেশন গাউন, এন-৯৫ ক্যাপ টাইপ ও ফোল্টেবল টাইপ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিজপজেবল স্ক্রাবস, উভেন ও কিটেন সু কভার ও হেড কভার, পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিরোধী স্ক্রাবস।
পুরো কারখানাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে জীবাণুমুক্ত গাউন তৈরির জন্য আলাদা ইটিও স্টেরালাইজেশন সুবিধা সম্পন্ন কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও বেক্সিমকো ও ইন্টারটেকের যৌথ উদ্যোগে পার্কের অভ্যন্তরে ১২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি সর্বাধুনিক পিপিই সেন্টার অব এক্সিলেন্স ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। এই পিপিই ল্যাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মানদণ্ড অনুসারে পিপিই তৈরির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।
চুক্তির বিষয়ে ইন্টারটেকের সিইও আন্দ্রে ল্যাক্রোইক্স জানান, একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোম্পানি হিসেবে ইন্টারটেকের লক্ষ্য হলো- জীবনমান, নিরাপত্তা ও স্থায়ীত্ব নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি উন্নততর ও অধিক নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যেই আমরা বেক্সিমকোর সাথে আমাদের চুক্তি সম্প্রসারিত করেছি। এর ফলে এই পিপিই উৎপাদন কেন্দ্রে সঠিক মান নিশ্চিত করে পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। চলমান মহামারীতে বিশ্বজুড়ে পিপিই সংকট, প্রয়োজনীয়তা এবং মানসম্মত ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও সরঞ্জমাদির অভাব আমরা লক্ষ্য করেছি। যেহেতু ইতিমধ্যেই বেক্সিমকো পিপিই উৎপাদনে বিশ্বজুড়েই সমাদৃত হয়েছে, তাই আমি বিশ্বাস করি, বিভিন্ন আপদকালীন সময়ে আগামীতে আমরা আরও নিরাপদ ও উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম হবো।
বেক্সিমকোর সিইও সৈয়দ নাভেদ হোসাইন বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেক্সিমকো নিরবচ্ছিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছে। আমি এই নতুন সূচনার জন্য আনন্দিত। কেননা এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের পিপিই উৎপাদন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। ইন্টারটেকের মান নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া আমাদের বিভিন্ন আইনি ও সম্মতিপত্র গ্রহণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে। এই উৎপাদন কেন্দ্রটি একাধারে উৎপাদক, ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, বিভিন্ন ব্রান্ড ও সরকারকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে। কারণ এখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানদণ্ড অনুসারে একইসাথে সকল প্রকার পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি সেই লক্ষ্যকে দৃশ্যমান করেছে।
বেক্সিমকো পিপিই পার্কটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই পণ্য সরবরাহ করবে। এর লক্ষ্য হলো- নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল কেন্দ্রীক না হয়ে সকল ধরনের পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানি।
বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের নতুন বেক্সিমকো স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্য সরবরাহকারীদের কাছে মাস্ক এবং প্রতিরক্ষামূলক গাউনসহ পিপিই সরবরাহের চুক্তি করেছে। তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানির জন্য সঠিক মানদণ্ড বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির সক্ষমতা ও এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার।
এর আগে বেক্সিমকো গত বছর মহামারীর শুরুর দিকে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে পিপিই উৎপাদন, প্রযুক্তি স্থাপন ও কৌশল আয়ত্তে এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট আডমিনিস্ট্রেশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৫ মিলিয়ন গাউন সরবরাহ করে।