spot_img

যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন বিশ্ব রাজনীতিতে

অবশ্যই পরুন

২০ জানুয়ারী দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রথম পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত ভাষণের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছেন। ওয়াশিংটনের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিস্তারিত ভাষণে বাইডেন তার শাসনামলে একটি ভিন্ন আমেরিকার দেখা মিলবে সংকেত দিয়ে নতুন মার্কিন প্রশানের পররাষ্ট্র নীতির রূপরেখার বিষয়ে জানিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে।’

আগামী ৪ বছরে আমেরিকা কী করবে সে সম্পর্কে অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি, বাইডেনের বিবৃতিটি জনসমক্ষে হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রষ্ট নীতিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে। ভাসনের মূল লক্ষ্য ছিল এটি আমেরিকাতে ট্রাম্পের সময়কালীন বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে শৃঙ্খলা পুনর্প্রতিষ্ঠা করা ও দেশটির প্রতি বিশ্বজনীন আস্থা ফিরিয়ে আনা। ট্রাম্প আমেরিকার অভ্যন্তরীন এবং পররাষ্ট্রনীতির যে ক্ষতি সাধন করেছেন, তা কাটিয়ে উঠতে বাইডেন প্রশাসন এখন বহুপাক্ষিক কূটনীতি এবং আরও ইতিবাচক উপায়ে অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করার দিকে আরও বেশি মনোনিবেশ করবে। তবে বাইডেন জোর বলেন যে, আমেরিকা যা চায়, তা পাওয়ার জন্য কূটনীতিই সেরা উপায়। এমনকি গণতন্ত্রের বিষয়েও। তিনি আমেরিকার পরিচয় এবং নীতিশাস্ত্রের একটি মূল দিক হিসাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্বতের ওপর বার বার জোর দিয়েছেন।

বাইডেন আরও বলেছেন যে, তার প্রশাসন মার্কিন জনগণের পক্ষে কল্যাণকর বলে বিবেচিত বিষয়গুলিই পরারাষ্ট্র নীতি হিসেবে গৃহীত হবে। তিনি অভিবাসন, শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা (প্রতি বছর ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার অভিবাসী) এবং এলজিবিটিকিউ অধিকারের প্রচারের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল নীতিমালা চান। তবে, এই নীতিগুলি কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের বিরূপ করে তুলতে করতে পারে এবং ফলে বাইডেন বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারেন।

রাশিয়ার সাথে মার্কিন সম্পর্ককে লক্ষ্য করে বাইডেন তার পূর্বসূরীর চেয়ে একদম আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আমেরিকা আর রাশিয়ার আগ্রাসন মেনে নেবে না। বাইডেন বলেন যে, তিনি আমেরিকার নির্বাচনগুলিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, সাইবার আক্রমণ করেছেন এবং দেশটির নাগরিকদের বিষিয়ে তুলেছেন। বাউডেন রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালিœর দুর্দশার কথাও উল্ল্খে করে তার মুক্তি দাবি করেছেন এবং এটিকে আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে দমন করায় রাশিয়ার প্রচেষ্টার সমালোচনা করেন।

তবে, বাইডেন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে পুতিনের সাথে কাজ করার বিষয়ে তার অভিপ্রায় জানিয়েছেন এবং দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন যে, আমেরিকা ও রাশিয়া তাদের পারমাণবিক মজুদকে ৫ বছরের জন্য হ্রাস করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে সম্মত হয়েছে। এটিও ট্রাম্পের ইন্টারমেডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স (আইএনএফ) এবং ‘ওপেন স্কাইস’ চুক্তি ত্যাগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরণের পরিবর্তন।

বাইডেন চীনকে আমেরিকার সবচেয়ে মারাত্মক প্রতিদ্ব›দ্বী হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং মানবাধিকার, বুদ্ধিগত সম্পত্তি এবং বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার ওপর চীনের আক্রমণকে ঠেকানোর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, একই সাথে তিনি বেইজিংকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকার সর্বোত্তম স্বার্থের ক্ষেত্রে তিনি চীনের সাথে এক যোগে কাজ করতে আগ্রহী।

ইরানের প্রতি বর্তমান আমেরিকার মনোভাব বাইডেনের বক্তৃতায় কেবল সউদী আরবের সাথে ইরানের দ্ব›েদ্বর উল্লেখ ছাড়া ইরানের অন্যান্য প্রসঙ্গের অনুপস্থিতির মধ্যে লক্ষণীয় ছিল। এটি তেহরানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক‚ল মনোভাবের বিপরীতে আরেকটি বড় পরিবর্তন। বাইডেন স্পষ্ট করে জানিয়েন যে, সউদী আরব ও ইরানের মধ্যকার দ্ব›েদ্বর অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ইয়েমেনের যুদ্ধ, যা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, সেখানে আমেরিকা যুদ্ধরত পক্ষগুলির প্রতি সমস্ত সমর্থন ও সহায়তার ইতি টানবে।

তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কে ইয়েমেনে জাতিসংঘ এবং সমস্ত পক্ষের সাথে বিরোধের অবসান ঘটানোর দায়িত্ব অর্পণ করে দেশটির জন্য বিশেষ দূত নিযোজিত করেছেন। আমেরিকার এই পদক্ষেপকে বাইডেন ‘পুনর্র্নিমাণ (আমেরিকার জোট)’ এবং ‘পুনরায় সংযুক্ত হওয়া (বিশ্বের সাথে)’ শব্দগুলি দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন। তবে, তিনি তার বক্তব্যে গুড ফ্রাইডে চুক্তির বিষয়ে হুমকিসহ ইউরোপ, ব্রিটেন এবং ব্রেক্সিট সম্পর্কে নীরবতা পালন করেছেন।

বাইডেন আমেরিকার মিত্র এবং শত্রুদের পরিষ্কারভাবে তাদের প্রতি দেশটির বর্তমান অবস্থান জানিয়েছেন। আমেরিকা পরবর্তী সময়ে কী করবে এবং কীভাবে দেশটি তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলিকে উন্নতি সাধন ও স্থিতিশীল করবে, সে সম্পর্কে তিনি একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে চেয়েছেন। এর মাধ্যমে বাইডেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকার অনিশ্চিত কার্যকলাপের যুগ শেষ হয়ে গেছে। সূত্র : দ্য কনভারসেশন।

সর্বশেষ সংবাদ

ফ্যাসিস্টদের মতো কারও ভয়েস কেড়ে নেয়া হবে না: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যেকটা সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণ করা হবে, সেখানে কি হতো, কারা...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ