আর্সেনালে পাওয়া বেতনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ বেতনে তুরস্কের একটি ক্লাবে যোগ দিয়ে ফুটবল ভক্তদের চমকে দিয়েছেন মেসুত ওজিল। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম আলোচিত এই জার্মান তারকা ফুটবলের বাইরেও নানা ধরনের ঘটনায় ও মন্তব্যে প্রায়ই থাকেন আলোচনায়।
ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল থেকে সম্প্রতি তিনি যোগ দিয়েছেন তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাখে। অথচ ৪৫০ মিলিয়ন পাউন্ড দেনায় আছে তুরস্কের এই ক্লাবটি। তাই ক্লাবটির ভক্তরা মেসুত ওজিলের এই চুক্তি সম্পন্ন করার অর্থ তুলতে একটি টেক্সট মেসেজ গ্রুপও খুলেছেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে আলোচনা- কেন এত কম বেতনে তুরস্কের একটি ক্লাবে গেলেন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবল তারকা মেসুত ওজিল!
গত বছরের মার্চ মাসের পর আর আর্সেনালের জার্সিতে মাঠে দেখা যায়নি তাকে। আর্সেনালের ভক্তদের একটি অংশ মনে করেন, উইঘুর মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ওজিলের মন্তব্যের পরে চীনের প্রথম সারির টেলিভিশন, সিসিটিভি ম্যানচেস্টার সিটি ও আর্সেনালের একটি খেলা শিডিউল থেকে সরিয়ে নেয়। তবে এরপরেও দলের হয়ে ওজিল খেলেছেন কিছু ম্যাচ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ওজিল উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন। তখন আর্সেনাল এই টুইট নিয়ে কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে এবং তারা বিবৃতি দেয় ওজিলের সকল মন্তব্য তার ব্যক্তিগত, আর্সেনাল ক্লাব হিসেবে কখনও রাজনৈতিক কিছুর সাথে জড়াবে না।
ওজিল তার সেই পোস্টে, উইঘুর মুসলিমদের যোদ্ধা বলে অভিহিত করেন এবং চীন এবং অন্য মুসলিমদের নীরবতার সমালোচনা করেন।
ওজিল তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার, তাই তুরস্কের সাথে তার হৃদ্যতা আছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথেও ওজিলের খুব ভালো সম্পর্কের আভাস আগেও দেখা গেছে। এর আগে ওজিলের বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন এরদোয়ান। তার স্ত্রীও একজন তুর্কি নারী।
গত বুধবার ওজিলকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের ক্লাবে দেখা যায়। সেই অনুষ্ঠানে ওজিল বলেন, আর যাই হোক জার্মানির হয়ে আর খেলবেন না তিনি। ইস্তাম্বুলের একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমে বুধবার ওজিল বলেছেন, ‘আমি জার্মান জাতীয় দলের সফলতায় খুব খুশি হব। কিন্তু সে দেশের হয়ে আর কখনও খেলব না।’
অন্যদিকে, প্রিয় ক্লাব আর্সেনাল ছাড়ার বিষয়ে এক বিবৃতিতে ওজিল বলেন, ‘আর্সেনালের সঙ্গে গত প্রায় সাড়ে সাত বছরে পথচলা আমার জন্য ছিল দারুণ ও উপভোগ্য। আমরা একসঙ্গে শিরোপা জিতেছি ও এমন কিছু দারুণ মুহূর্ত কাটিয়েছি, যা সারাজীবন আমার স্মৃতিতে থাকবে। আমি এ মুহূর্তে আর্সেনাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে সেই সময়ের ক্লাব রেকর্ড ৪২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন ওজিল। প্রথম মৌসুমেই আর্সেনালকে এফএ কাপের শিরোপা এনে দেন বিশ্বকাপজয়ী এ মিডফিল্ডার।
আর্সেনালের জার্সিতে প্রায় সাড়ে সাত বছরে তিনটি এফএ কাপের শিরোপা জেতার পাশাপাশি সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৫৪ ম্যাচ খেলেছেন ওজিল। ৪৪ গোল করেছেন। থিয়েরি অঁরি ও কেভিন ডি ব্রুইনার পরই ওজিলের অবস্থান। এর পরও গত বছরের মার্চ থেকে কোচ মিকেল আর্তেতার দলে উপেক্ষিত ছিলেন তিনি।
চলতি মৌসুম পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও এবারের প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগে তাকে মাঠে নামায়নি আর্সেনাল। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ মিলিয়ন ইউরোতে তুরস্কের ফেনারবাখে নাম লেখালেন ওজিল। আর্সেনালে তার বেতন ছিল বার্ষিক ২০ মিলিয়ন ইউরো।