spot_img

উত্তম ও অধম জীবন সামগ্রী

অবশ্যই পরুন

‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তোমার উত্তম জীবন সামগ্রী দেবেন এবং অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অনুগ্রহ দান করবেন (সূরা হুদ-২)।

আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন এ ধরনের মতামত চলে আসছে যে, দুনিয়ায় মুসলমান গরিব বা ফকির হালতে জীবন যাপন করবে এ কথা ভেবে যে, সে দুনিয়ায় দু’দিনের মুসাফির। কিন্তু উপরোল্লিখিত সূরা হুদের ২ নং আয়াতে আমরা বিপরীত চিত্র দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বলা হচ্ছে, মুসলমানরা ধন-সম্পদ, সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ হতে পারে। অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত খারাপভাবে নয়, ভালোভাবেই থাকবে। আল্লাহর নিয়ামতসমূহ নিয়মিত তাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। তারা বরকত ও প্রাচুর্যলাভে ধন্য হবে। সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। শান্তিময় ও নিরাপদ জীবন যাপন করবে। কোনো প্রকার লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকবে। সূরা নাহলের ৯৭ নং আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেÑ ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব।’

আমাদের মাঝে সাধারণভাবে এমন একটি বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে আছে যে, আল্লাহভীতি, সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন করলে মানুষ আখিরাতে লাভবান হলেও হতে পারে কিন্তু এর ফলে তাদের দুনিয়া বরবাদ হয়ে যায়। এ মন্ত্র শয়তান প্রত্যেক দুনিয়ার মোহে মুগ্ধ অজ্ঞ-নির্বোধের কানে ফুঁকে দেয়। এ সঙ্গে তাদেরকে এ প্ররোচনাও দেয় যে, এ ধরনের আল্লাহভীরু ও সৎলোকদের জীবনে দারিদ্র্য, অভাব ও অনাহার ছাড়া আর কিছুই নেই। মহান আল্লাহ এ ধারণার প্রতিবাদ করে উল্লিখিত আয়াতে বলেন, ‘এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের শুধু আখিরাতেই নয় দুনিয়ায়ও সমৃদ্ধ হবে। আখিরাতের মতো এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্য ও এমন লোকদের জন্য নির্ধারণ করেন, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ আনুগত্যসহকারে সৎ জীবন যাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোনো ক্লেদ ও গ্লানি নেই, যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা যেতে পারে, যাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোনো ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের আশঙ্কা করে না।’

এ ছাড়া ‘মাতাউল হুসন’ উত্তম জীবন সামগ্রী শব্দের মধ্যে আরো একটি দিকও রয়েছে। এ দিকটি দৃষ্টির অগোচরে চলে যাওয়া উচিত নয়। কুরআন মাজিদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী দুই প্রকারের। এক প্রকারের জীবন সামগ্রী আল্লাহবিমুখ লোকদের ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদেরকে দুনিয়া পূজা ও আল্লাহ বিস্মৃতির মধ্যে আরো বেশি করে হারিয়ে যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটি নিয়ামত ঠিকই কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে, এটি আল্লাহর লানত ও আজাবের পটভূমিই রচনা করে। কুরআন মাজিদ মাতাউল গারুর তথা প্রতারণার সামগ্রী নামেও একে স্মরণ করে।

দ্বিতীয় প্রকারের জীবন সামগ্রী মানুষকে আরো বেশি কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে। এভাবে সে আল্লাহর, তাঁর বান্দাদের এবং নিজের অধিকার আরো বেশি করে আদায় করতে সক্ষম হয়। আল্লাহর দেয়া উপকরণাদির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয় করে যে দুনিয়ায় ভালো, ন্যায় ও কল্যাণের উন্নয়ন এবং মন্দ, বিপর্যয় ও অকল্যাণের পথ রোধ করার জন্য আরো বেশি প্রভাবশালী ও কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ হচ্ছে কুরআনের ভাষায় উত্তম জীবন সামগ্রী। অর্থাৎ এমন উন্নত পর্যায়ের জীবন সামগ্রী যা নিছক দুনিয়ার আয়েশ-আরামের মধ্যেই খতম হয়ে যায় না বরং পরিণামে আখিরাতেও শান্তির উপকরণে পরিণত হয়। যাকে মাতাউল হুসন বা উত্তম দ্রব্যসামগ্রী বলা হয়।

মাতাউল হুসন ও গারুর আরো কথা হলোÑ যারা মাতাউল গারুর তথা ধন-সম্পদে প্রতারণার শিকার তারা বৈষয়িক ও ভোগবাদী, যারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য জীবন ধারণ করে, একেকটি পয়সার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে যায় এবং লাভ-লোকসানের খতিয়ানের প্রতি সবসময় শ্যেন দৃষ্টি রেখে চলে, তারা কখনো মহান উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যের জন্য কিছু করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। আপাত দৃষ্টিতে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের জন্য তারা অর্থ ব্যয় করে ঠিকই কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তারা নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, বংশীয় বা জাতীয় বৈষয়িক লাভের হিসাব নিকাশটা আগেই করে নেয়। এই মানসিকতা নিয়ে এমন একটি দ্বীনের পথে তারা এক পা-ও অগ্রসর হতে পারে না, যার দাবি হচ্ছে পার্থিব লাভ-ক্ষতির পরোয়া না করে নিছক আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে নিজের অর্থ ব্যয় করতে পারে। এটিই মাতাউল গারুর।

কিন্তু মাতাউল হুসন তথা উত্তম দ্রব্যসামগ্রীর অধিকারীরা ভিন্নতর বৃত্তির অধিকারী হয়। তাদের প্রসারিত দৃষ্টি বিপুল মনোবল ও উদার মানসিকতা বিশেষ করে আল্লাহর নির্ভেজাল সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। ভোগবাদী বস্তুবাদী নৈতিকতার পরিবর্তে উল্লিখিত নৈতিক গুণাবলির বিকাশ সাধিত হয়। ধন-সম্পদ নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর তা আত্মীয়স্বজন, অভাবী, জনকল্যাণমূলক ও আল্লাহর পথে সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ব্যয় হয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যয় করা হয়।

এর লেখক : সালাত শ্রেষ্ঠ ইবাদত কেন, কথা সংস্কৃতির আগ্রাসন-১, ২, ৩-বইয়ের লেখক

সর্বশেষ সংবাদ

এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক হবেন: ড. ইউনূস

বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণই হবে সকল ক্ষমতার মালিক— এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড....

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ