প্রথম কথা হলো ভ্রমণপ্রিয় বা সৌন্দর্যপিয়াসু মানুষরা বিপজ্জনক জায়গাগুলোতেও চরম সৌন্দর্য আহরণে পিছপা হন না। তবু বিশ্বের অনেক জায়গা বা দেশ আছে যেসব জায়গা বা দেশগুলো সত্যিকার অর্থেই ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিপজ্জনক বলে যে এসব দেশে পর্যটক আসে না তা কিন্তু নয়। বিপজ্জনক জেনেও এসব দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সৌন্দর্যের টানে ঘুরতে আসেন। আজকের লেখাটি তেমনি কিছু দেশ সম্পর্কে। যেসব দেশ ভ্রমণ করলে আপনি কখনো হয়তো নিয়ে ফিরতে পারেন ভ্রমণ জীবনের সবথেকে বাজে অভিজ্ঞতা নয়তো জীবনের সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্তটি।
প্রথমেই বলতে হয় মেক্সিকোর কথা। কারণ দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিশেবে মেক্সিকো নামটি অতি সুপরিচিত। সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ মেক্সিকোকে বানিয়েছে পর্যটকদের জন্য ঝুকিপূর্ণ এক গন্তব্য।
সিউদাদ জুয়ারেজ মেক্সিকোর সবচেয়ে সহিংস শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। আবার এই সিউদাদের সৌন্দর্যও অমলিন। তাই এখানে প্রতি বছর অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু সিউদাদে পর্যটকের প্রধান সমস্যাটি সেখানকার পুলিশ নিয়েই।
কারণ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। এ কারণে অনেক অপরাধেরই কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না সেখানে। তাই ভ্রমণ উপযোগী এই দেশটিকে বিপজ্জনক পর্যটনের দেশ বলা যেতেই পারে!
তারপরেই যদি কাবুলের কথা বলি, তাহলে পাঠক আশ্চর্য হবেন না নিশ্চয়। কারণ আফগানিস্তানের কাবুল শহরটি গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরের খেতাব ধরে রেখেছে।
বোমা হামলাসহ সন্ত্রাসী হামলা এখনো কাবুলে নিত্য ঘটনার মতোই মনে হয়। মোট কথা এটি এমন একটি শহর যেখানে যেকোন সময় সহিংসতা ছড়াতে পারে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুসারে ২০১৯ সালে আফগানিস্তান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ। এই দেশটি তাই নিঃসন্দেহে ভ্রমণের জন্য বিপজ্জনক।
কাবুল শহরের মতোই অবস্থা ইরাকের বাগদাদের। এই শহরটিতেও বোমা হামলা, গুলিবর্ষণ এবং অন্যান্য সহিংসতা খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে গত কয়েক দশকে। বাগদাদ ইরাকের বিপজ্জনক জায়গাগুলোর অন্যতম। এটি আরেকটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যা বিদ্রোহী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
বেশিদিন আগের কথা নয়, এই কিছু বছর আগেও মেক্সিকোর আকাপুলকো একটি নিরাপদ ও বিলাসবহুল রিসোর্ট এলাকা হিসেবে বিবেচিত হতো। যদিও আকাপুলকোতে পর্যটন এখনো অনুমোদিত; তবে সংগঠিত সহিংসতা ও মাদকসংক্রান্ত হত্যাকাণ্ডের কারণে পর্যটক ও স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে আকাপুলকোতে পর্যটন ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, এই শহর মেক্সিকোর ‘খুনের রাজধানী’ নামে পরিচিত- বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ খুনের হার (প্রতি ১ লক্ষ জনের মধ্যে ১৪২ জন) শহরটিকে ভ্রমণের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক স্থানে পরিণত করেছে।
আকাপুলকোতে আসা ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হয়, তারা যেন রিসোর্টের নিরাপত্তা ছেড়ে না বের হন; কেননা, বেশিরভাগ অপরাধই রিসোর্টের আশেপাশের এলাকাতেই ঘটে।
অ্যামাজন কিংবা বৃহদাকার এনাকোন্ডার দেশ ব্রাজিল। যেখানে রয়েছে প্রাণ বৈচিত্র্যের এক বিশাল সংগ্রহ। দেখতে দেখতে যেন ফুরায় না এখানে থাকা প্রকৃতির রহস্যগুলো। তাই ব্রাজিল পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আগ্রহের জায়গা।
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো পর্যটকদের জনপ্রিয় একটি ‘স্পট’। বলা হয় যে ব্রাজিলের প্রায় শহরেই অপরাধের হার খুব বেশি; তবে সেগুলোর কোনোটিই রিও ডি জেনেইরোর চেয়ে বিপজ্জনক নয়। তবু রিও ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রতি বছর ১২ লাখ পর্যটক এই জায়গাটিতে ভ্রমণ করেন।
এই রিওতে পথে-ঘাটে এখনো অপরাধ দেখা যায়, বিশেষ করে রাতে রিওতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এর সাথে যুক্ত বিক্ষোভ একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই সেখানে ভ্রমণ করার আগে ভ্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা যাচাই করে নেবেন।
রেইনফরেস্ট ও সাদা বালুর সৈকত উপভোগ করা দারুণ ব্যাপার বলে রিও ডি জেনেইরোতে গেলে সাধারণ বিচার-বুদ্ধির ব্যবহার এবং যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন করতে যেন ভুলবেন না।