দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানিয়েছে, আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হবে না। কারণ দেশে এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম।
পেঁয়াজের ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম এখন সমান। দুদেশের পেঁয়াজের দামে কোনো পার্থক্য নেই। স্বাদে অতুলনীয় বলে ক্রেতাদের আগ্রহ দেশি পেঁয়াজের প্রতি।
আপাতত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করেছেন সেখানকার আমদানিকারকরা। তবে ঘোষণা না দিলেও দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসছে না বলে জনিয়েছে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ জানান, দাম যদি দেশি পেঁয়াজের তুলনায় আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের বেশি হয় বা সমান হয়, তাহলে কি কারণে ক্রেতারা তা কিনবেন? যে কোনো বিচারে আমদানি করা পেঁয়াজের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ উত্তম।
উল্লেখ্য, দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা না থাকায় গত ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। একইসঙ্গে দেশের বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েও কোনো ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না।
ভারতে পেয়াজের মূল্য, পরিবহন খরচ ও বাংলাদেশের ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক যুক্ত করে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানির পর প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম দাড়ায় ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। কিন্তু দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসায়ীর মুনাফা ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে তা বাজার থেকে ক্রেতা কিনছেন সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে।
অপরদিকে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে বর্ডার থেকে কিনে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে এনে তার পরিবহন খরচ ও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মুনাফা মিটিয়ে ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে হবে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে। তাই এ ব্যবসা কেউ করতে চাচ্ছেন না। সাধারণত দেশি পেঁয়াজের দামের তুলনায় আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ টাকা কম না হলে ভোক্তারা ভারতীয় পেয়াজ কিনতে চান না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানি গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ প্রচুর। চাহিদার দিক থেকে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দেশে পেঁয়াজের দাম এমনিতেই কম। অপরদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে বর্তমানে ভারতীয় পেয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের দামের তুলনায় বেশি হওয়ায় লোকসান ঠেকাতে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করছে না। তবে আগামী মাস থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। কারণ তখন দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমবে। এই সুযোগে আমদানি শুল্ক মিটিয়েও ব্যবসায়ীরা কিছুটা মুনাফা পাবেন। ফলে বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের কোনও আমদানি নেই। মৌসুমের প্রথম কয়েকদিন বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে কোনও পেঁয়াজ আসছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কে এম তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুল্কারোপের ফলে আদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ছে। অপরদিকে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কম। ফলে ভোক্তাদের আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ নেই মোটেই। কম দামে দেশি পেয়াজ কিনছেন ভোক্তারা। চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। তাই তারা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন।