অতিমারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড ব্রিটেন। গত ৪ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে তৃতীয় দফা লকডাউন শুরু হলেও থামছে না ভাইরাসটির তাণ্ডব। গত একদিনেও ১৩শ’ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে সেখানে। একই সাথে দীর্ঘ হয়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমতাবস্থায় আগামীকাল সোমবার থেকে দেশটিতে সব ধরনের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, গত একদিনে ৪১ হাজার ৩৪৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ২৯৫ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮ হাজার ৫৯০ জনে ঠেকেছে।
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনামুক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ১৯ হাজার ১০৬জন রোগী। এর মধ্যে গত একদিনের বেঁচে ফিরেছেন ১৫ হাজার ৪৫২ জন।
এদিকে, আশঙ্কাজনকহারে ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাসটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই আছে। এমতাবস্থায় লন্ডনে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মেয়র।
স্থানীয় সময় গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ ঘোষণা দেন। এ সময়ে জনসাধারণকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
সাদিক খান বলেন, ‘যেভাবে করোনা বিস্তার লাভ করেছে, তা দিনদিন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোর শয্যা শেষ হয়ে যাবে। আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি। কারণ, আমাদের শহরে হুমকি হয়ে ওঠা ভাইরাসটির প্রকোপ সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘লন্ডনের কিছু কিছু জায়গায় প্রতি ২০ জনে একজনের শরীরে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। যা খুবই উদ্বেগের। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও বেড়ে গেছে চাপ। দিনে আসছে ৯ হাজারের বেশি কল।’
এদিকে দেশটিতে ক্রমাগত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনার নতুন স্ট্রেইন। টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তার সুফল তেমনটা মিলেনি বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ফলে পরিস্থিতি আরও সংকটের দিকে পৌঁছাচ্ছে, হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন থেকে ঝুঁকি এড়াতে আগামীকাল সোমবার থেকে সব ধরনের ভ্রমণ পথ বন্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে কেউ যদি দেশটিতে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘নতুন এই নিয়ম কমপক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর চারটা থেকে সব ধরনের ভ্রমণের পথ বন্ধ থাকবে।’
ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দিনের পর দিন আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এমন সব পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমারা করোনাভাইরাসের টিকার ব্যাপারে আশাবাদী এবং একই সঙ্গে নতুন যে স্ট্রেইন দেশের বাইরে থেকে আসছে সেটা বন্ধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।’
ব্রাজিলের করোনাভাইরাসের আলাদা এবং অজ্ঞাত এক ধরণ শনাক্ত হলে উদ্বেগ তৈরি হয় যুক্তরাজ্যে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা এবং পর্তুগালের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি।
বলা হয়েছে যে, এরপরও যারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে তাদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।