জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আসন্ন এ সফরে আলোচ্য বিষয় ও সূচি ঠিক করতে জানুয়ারির শেষে ভারতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব নিজেই।
তিনি বলেন, আমার আগে যাওয়ার কথা ছিল। সময় মতো দিল্লি যেতে পারলে গত ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক কাজ করা যেত। এখন জানুয়ারির শেষে যাওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকায় আসার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। সুতরাং সেটিকে মাথায় রেখে সম্প্রতি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পরে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে অনেক ক্লু দেয়া আছে বা সিদ্ধান্তের কথা আছে। সেগুলো এবং ২৬ মার্চ যখন আসবেন তখন কী আলোচনা করা যায় সেটির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এজেন্ডার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক, প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল সামিট এবং ২৬ মার্চে স্বশরীরে বৈঠককে মাথায় রেখে আমরা এজেন্ডা ঠিক করবো।
সম্প্রতি বিভিন্ন বৈঠকে প্রথাগত বিষয়ের পাশাপাশি নতুন কিছু সহযোগিতার বিষয় উঠে এসেছে যেগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে চায় দুই দেশ।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নতুন যে উপাদানগুলো (যেমন কানেক্টিভিটি, ইনফরমেশন টেকনোলজি, লাইন অফ ক্রেডিটের গতি কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে) বের হয়ে এসেছে সেগুলোকে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারি-এইসব বিষয় আসবে।
এছাড়া প্রথাগত যে বিষয়গুলো (যেমন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, স্থল সীমান্তের অমীমাংসিত বিষয়, অন্য নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা) আছে যা আমরা প্রতিবারই তাদের কাছে তুলে ধরি, সেগুলো এরমধ্যে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এরমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ভালো বৈঠক হয়েছে। কিন্তু দেখার বিষয় এর ফলাফল কী হচ্ছে বা সেখানে যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেওয়া হচ্ছে সেটির বাস্তবায়ন কতদূর। না হলে কেন হচ্ছে না এবং কী হলে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে তা আলোচনা করা হবে।
ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অসুবিধার মধ্যে পড়েন- এ বিষয়ে সচিব বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু বাণিজ্যিক ইস্যু রয়েছে। যেমন শুল্ক ও অশুল্ক বাধা। ভারতকে আমরা বলেছি, যদি তারা কোনো বাধা আরোপ করে তবে একটি নোটিশ দিয়ে করলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। না হলে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে জনগণ মন্তব্য করে। যেমন পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমরা এটি দেখতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এগুলো পুনরাবৃত্তি না করতে তাদের খেয়াল রাখতে বলেছি।
জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এতদিন বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে বলে ধারণা করতাম। এখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কি করবো সেটা নিয়ে ভাবছি।
তিনি আরো বলেন, যদি দক্ষিণ এশিয়ার কোনো অঞ্চলে কম উৎপাদন হয়, তবে আমরা বিদ্যুৎ বাণিজ্য করতে পারি। এখন আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে এবং শিগগিরই বড় বড় বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো উৎপাদনে যাবে। এর সঙ্গে রূপপুর যদি আমরা পেয়ে যাই তবে সেটি উৎপাদন বড় আকারে বাড়িয়ে দেবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।