ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার ঘটনাটি একটি সুপরিকল্পিত মিশন ছিল বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই মূল অভিযুক্তরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তদন্তে জানা গেছে, প্রধান আসামি ফয়সালসহ সহযোগীরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সিএনজিযোগে আমিনবাজার এবং পরে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে ফিলিপ ও সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তির সহযোগিতায় তারা অবৈধভাবে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করে। ভারতের অভ্যন্তরে ‘পুত্তি’ ও ট্যাক্সি ড্রাইভার ‘সামি’র মাধ্যমে তারা আত্মগোপন করে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জবানবন্দি বিশ্লেষণে দেখা যায়—ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনাস্থল থেকে ঢাকা থেকে সিএনজি করে আমিনবাজারে যান। পরে তারা মানিকগঞ্জের কালামপুরে পৌঁছান এবং সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান।’
তিনি আরো জানান, হালুয়াঘাটে পৌঁছানোর আগে মুনফিলিং স্টেশনে ফিলিপ এবং সঞ্জয় তাদের গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিল। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জনৈক পুত্তির কাছে পৌঁছে দেন। পুত্তি এরপর তাদের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার সামির কাছে হস্তান্তর করেন। ওই ট্যাক্সি ড্রাইভার তাদের মেঘালয়ের পুরা নামক একটি শহরে পৌঁছে দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ইনফরমাল চ্যানেলের মাধ্যমে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়—পুত্তি এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ সন্দেহ করছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত পার হয়েছেন।’
নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামী ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এই চাঞ্চল্যকর মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনে জুমার নামাজ শেষে ফেরার পথে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। প্রথমে হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও হাদির মৃত্যুর পর আদালতের আদেশে এটি ৩০২ ধারায় হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

