spot_img

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

অবশ্যই পরুন

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিন সকাল সোয়া ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এর আগে সকাল ৭টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনিও কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মন্তুদ দিনগুলোর একটি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, বিজয়ের ঊষালগ্নে জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। দিনটি বাঙালি জাতির জন্য দুঃসহ বেদনার স্মারক।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষ পর্যায়ে, যখন সারা দেশের মানুষ চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই দেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই নৃশংস নিধনযজ্ঞ সেদিন গোটা জাতিসহ পুরো বিশ্বকে হতবিহবল করে দেয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।’

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ঘাতকচক্র শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ’ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী এবং উচ্চপদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নেওয়া হয়। পরে তাদের হত্যা করে নিস্তব্ধ ভুতুড়ে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়।

পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক নিথর দেহ। কারও শরীর ছিল বুলেটবিদ্ধ, কারও অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। অনেককে হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।

স্বাধীনতার ঊষালগ্নে স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে মানুষ শিউরে উঠেছিল। মুহূর্তেই সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল।

হত্যার আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল— এ তথ্যও পরে প্রকাশ পায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের রচিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী তাদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা যুগিয়েছেন এবং মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তারা গোটা জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাছে কোনোভাবেই সহ্য হয়নি।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের এই ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। ওই দিন থেকেই তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের একে একে রাতের আঁধারে বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।

প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ পরিবেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এদিন সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে স্মৃতিসৌধ সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

ঢাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নয়াদিল্লির বিবৃতি

এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানির সুযোগ দেওয়া এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ