পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ছে, যা দেশটির কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও তাঁর পরিবার ও সমর্থকদের উদ্বেগ কমাতে পারেনি। ২০২৩ সাল থেকে কারাবন্দী থাকা এই নেতাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর পরিবার বা আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, যা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় উপহার চুরি থেকে শুরু করে সেনা সদর দপ্তরে হামলা উসকানি পর্যন্ত ১৫০টির বেশি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তিনি ১৪ বছরের সাজা পেয়েছেন।
ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব অতিরঞ্জিত মনে হলেও তাঁকে ‘গণমানুষের কল্পনা থেকে মুছে ফেলার’ জন্য ক্ষমতাসীনদের তৎপরতা প্রকৃতই সত্য।
সেনাবাহিনী ও সরকার চেষ্টা করছে ইমরান খানকে টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনগণের স্মৃতি—সব জায়গা থেকে মুছে ফেলতে। কিছু টেলিভিশন চ্যানেল তাঁকে ‘কাসিমের বাবা’ (ব্রিটেনে থাকা তাঁর দুই ছেলের একজন কাসিম খান) বলে উল্লেখ করে।
আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে ইমরান খানের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দুই বছর কারাগারে থেকেও ইমরান এখনো দমে যাননি। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জোরালো বিরোধী কণ্ঠ। আইনজীবী, দলের নেতা-কর্মী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় দল—সবাই মিলে তাঁর বার্তা বাইরে পৌঁছে দেয়।
পাকিস্তানের ইতিহাসে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের কারাভোগ করাটা যেন একটি অনিবার্য অংশ। জুলফিকার আলী ভুট্টো থেকে শুরু করে, গত ৫০ বছরে প্রায় প্রত্যেক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে কোনো না কোনো সময় কারাগারে যেতে হয়েছে।
ভুট্টো ছাড়া অন্য সব প্রধানমন্ত্রীই শেষ পর্যন্ত কারাগার থেকে জীবিত বেরিয়ে এসেছেন এবং কেউ কেউ ক্ষমতায়ও ফিরেছেন। এর সহজ নিয়ম হলো—সেনাবাহিনীর সঙ্গে আপস করা, দেশ ছাড়া এবং সময়ের অপেক্ষা করা।
পাকিস্তানের রাজনীতি বোঝেন—এমন সবাই মনে করতেন, একসময় ইমরান খানের জেলে যাওয়া অনিবার্য। প্রশ্ন ছিল, তিনি কি আপস করে লন্ডনে নির্বাসনে যাবেন, নাকি জেদি ইমরান নিজের ভাগ্যে বিশ্বাস রেখে লড়াই চালিয়ে যাবেন? তাঁর বিরোধীরাও এখন বলছেন, ইমরান আপস করেননি, কারণ তাঁর কাছে প্রকৃতপক্ষে কোনো আপসের প্রস্তাবই নেই।
ইমরান খান যখন কারাগারে, তখন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন।
সম্প্রতি তিনি একটি সাংবিধানিক সংশোধন করিয়ে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও তাঁর অধীন করেন। তাঁর মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে এবং তাঁকে আজীবন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
‘পুতুল নেতা’ পছন্দ: জেনারেলদের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে তাঁদের জন্য একজন ‘অনুগত’ প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজন আরও কমে গেছে। দীর্ঘ অভ্যুত্থানের ইতিহাস থাকা এ দেশে সেনাবাহিনী এখন ঘোষণা ছাড়া সামরিক শাসন চালাতে পুতুল নেতাদেরই পছন্দ করছে।
সামরিক বাহিনী মনে করে, তারা ‘খাঁচার চাবিটা’ ফেলে দিয়েছে। এখন খাঁচার ভেতর থেকে তাঁর সপ্তাহিক ‘গর্জন’ আর অভিযোগ-সমালোচনার আওয়াজ পুরোপুরি থামিয়ে দিতে চায় তারা।

