spot_img

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি

অবশ্যই পরুন

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গত শুক্রবারের ভূমিকম্পের সময় তীব্র ঝাঁকুনিতে কয়েকটি স্থানে ভবন হেলে পড়া ও দেয়াল ফেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে রাজউকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া নির্মাণ-ত্রুটি ভবনগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযানও শুরু করবে রাজউক। গতকাল শনিবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম ও কর্মকর্তারা।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর রাজধানীর স্বামীবাগ থেকে লোকজন ফোন করে জানান, ওই এলাকায় একটি আটতলা ভবন হেলে পড়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখেন ভবনটি ঠিক আছে। একইভাবে কলাবাগান এলাকা থেকে ফোন আসার পর সেখানে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ফোন করে জানান, একটি ভবনের ওপর আরেকটি ভবন হেলে পড়েছে।

ভবন ফেটে গেছে। এমন ১৫টি খবর আসে আমাদের কাছে। এর মধ্যে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দুটি, নরসিংদীতে একটি এবং চট্টগ্রামে একটি ভবন হেলে পড়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। ভবনগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক করে আসা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়াররা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’

খিলগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘হেলে পড়া ভবনের বিষয়ে আমাদের কোনো সংস্থা থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।’

অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৪টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন-আল-ওয়াজেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিস্তারিত তদন্ত সম্পন্ন হলে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তখন সঠিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাজধানীর ১৪টি স্থান ও স্থাপনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম—হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ভবন। এ ছাড়া মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, আরমানিটোলা, স্বামীবাগ, সূত্রাপুর, বনানী, কলাবাগান, দক্ষিণ বনশ্রীতে একটি করে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা, সিপাহীবাগ এবং মগবাজারেও (মধুবাগ) একটি করে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আরমানিটোলার বংশাল কসাইটুলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি সাততলা ভবনের ছাদের রেলিং ধসে চার পথচারী গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম গতকাল জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর যেসব ভবন হেলে পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলো দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল রাজউক থেকে জানানো হয়, শুক্রবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন রাজউক চেয়ারম্যান। এ সময় আরমানিটোলার রেলিং ভেঙে তিনজন নিহত হওয়া ভবনটি পরিদর্শনের সময় ভবনের নকশা দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় ভবনটির মালিকপক্ষকে আগামী সাত দিনের মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর নকশা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর মুগদা এলাকায় পার্শ্ববর্তী ভবনের ওপর হেলে পড়া একটি ভবন পরিদর্শন করেন রাজউক চেয়ারম্যান। পরিদর্শনকালে সার্বিক দিক বিবেচনায় ঝুঁকি চিহ্নিত করে ভবন দুটির নিচতলায় থাকা দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সাত দিনের মধ্যে ভবনগুলোর নকশা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা ভাসমান খাবারের দোকান ও হোটেলগুলো অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন রাজউক চেয়ারম্যান।

এ ছাড়া বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজের তিনটি ভবন ঘুরে দেখা হয়। এর মধ্যে কলামে ফাটল ধরায় দুটি ভবনের নকশা দাখিলের নির্দেশ দিয়ে ভবন দুটি অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন রাজউক চেয়ারম্যান। এর জন্য স্কুলের পাঠ কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ : রাজউক চেয়ারম্যান : পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোনো প্ল্যান ছাড়া এক কাঠার কম জমিতেও ছয়-সাততলা বাড়ি করা হয়েছে।’ গতকাল শনিবার পুরান ঢাকার বংশাল, মুগদাসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভূমিকম্পে রাজধানীর কসাইটুলীর রেলিং ভেঙে পড়া ভবনটির নকশা আগামী সাত দিনের মধ্যে দেখাতে ব্যর্থ হলে ভবনটি সিলগালা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এক কাঠার নিচে আমরা কোনো প্ল্যান দিই না। যারা জোর করে করতেছে, আমরা তাদের মিটার কেটে দিচ্ছি। তার পরও আবার চোরাই মিটার নিয়ে বা জেনারেটর দিয়ে তারা করছে। পুরান ঢাকার শত বছরের পুরনো ভবনের ঐতিহ্য রক্ষা করেই নতুন পরিকল্পিত নগরায়ণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।’

পরে মুগদা এলাকায় পাশের ভবনের ওপর হেলে পড়া একটি ভবন ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজের তিনটি ভবন ঘুরে দেখেন তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ

নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লাল, হলুদ, সবুজ ৩ ভাগে নিয়ন্ত্রণ হবে: ইসি সচিব

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা দেশকে লাল, হলুদ, সবুজ—তিন ভাগে ভাগ করে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ