ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মদ নায়েনি বলেছেন, ১২ দিনের সংঘাতে ইরান প্রমাণ করেছে যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি প্রকৃতপক্ষেই প্রতিরোধক্ষম। আর যুক্তরাষ্ট্রও বুঝে গেছে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মুখোমুখি হওয়া কোনো সহজ কাজ নয়।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জুনে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত ইসরায়েল যে যুদ্ধ ইরানের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল, সেটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জটিল যুদ্ধগুলোর একটি। শত্রুরা ইরানের শক্তি ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছিল এবং ইরানের শক্তির উপাদান এবং বস্তুগত কাঠামোর উপর নির্ভরতা সম্পর্কে শত্রুদের ভুল গণনা তাদের পরাজয়ের মূল কারণ ছিল।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৮০–৮৮ সালের ইরাক–ইরান যুদ্ধেও শত্রুপক্ষ একই ধরনের ভুল করেছিল। ইরানের বিপুল গণ-সমর্থন ও বাস্তব সামরিক সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছিল তারা।
নায়েনি জানান, সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধ ছিল একটি “কৌশলগত মোড় বদলের মুহূর্ত।” এটি কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াই নয়, বরং ন্যাটো দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকমের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ পশ্চিম এশিয়ার শক্তির ভারসাম্য পাল্টে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আইআরজিসির এই মুখপাত্র শহীদ ইরানি কমান্ডার রাশিদ, সালামি ও হাজিজাদেহর কথা উল্লেখ করেন, যারা যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাব্য সব কৌশল নিয়মিত বিশ্লেষণ করতেন। তিনি আরও বলেন, তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যার পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী।
নায়েনি বলেন, এই যুদ্ধ আধুনিক হুমকি, নতুন প্রজন্মের যুদ্ধ ও হাইব্রিড আক্রমণের একটি শিক্ষণীয় মডেল। সাইবারস্পেস, গণমাধ্যম, সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও প্রযুক্তি—সবই আধুনিক যুদ্ধের অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্পষ্ট হয়েছে।
চলতি বছরের ১২ জুন ইসরায়েল কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানের ওপর আক্রমণ চালায়। সেসময় ওয়াশিংটন ও তেহরান পারমাণবিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এই হামলা ১২ দিনের এক যুদ্ধের সূচনা করে, যাতে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষও ছিলেন।
এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি অংশ নেয় এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। ইরান পাল্টা হামলায় দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনা এবং কাতারের আল–উদেইদে অবস্থিত আমেরিকার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ২৪ জুন উভয়ের সম্মতিতে থামে সেই সংঘাত।
সূত্র: মেহের

