দিন দিন পুরুষদের বন্ধ্যাত্বও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত বা মসলাদার খাবার পুরুষদের উর্বরতাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এছাড়া রাতের শিফটে কাজ এবং মানসিক চাপ তো আছেই; এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে একটানা ডেস্কে বসে কাজ করার অভ্যাস। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে আমাদের বেশিরভাগ সময়ই কাটে ল্যাপটপের সঙ্গে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং হার্ভার্ড স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষদের শুক্রাণুর মান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘ সময় ধরে ডেস্কে বসে কাজ করা। যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন বা সারাক্ষণ কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন, তাদের ওপর করা পরীক্ষায় এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে- শুক্রাণুর সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায়, দিনে দিনে এবং মাসে মাসে পরিবর্তিত হতে পারে।
একটানা বসে থাকা
চিকিৎসকরা জানান, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা সাধারণত শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি কম থাকে। তাহলেই শুক্রাণুর উৎপাদন স্বাভাবিকভাবে হবে। একটানা বসে থাকার কারণে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ল্যাপটপ নিয়ে বসা
যারা ল্যাপটপ কোলে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। ল্যাপটপ থেকে নির্গত তাপ শুক্রাশয়ের তাপমাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান কমে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ল্যাপটপ থেকে নির্গত তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ সরাসরি প্রভাব ফেললে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়।
আঁটসাঁট প্যান্ট পরা
আঁটসাঁট প্যান্ট বা অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরার ফলে শুক্রাশয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা শুক্রাণু উৎপাদনকে কমিয়ে দিতে পারে। একই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় বসে কাজ করলে এই প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়।
উত্তপ্ত গাড়ির আসনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
ওজন এবং বিপাকেও প্রভাব ফেলে
ওজন এবং বিপাকের ওপর দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বসে থাকা প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষ করে পেটের চর্বি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগুলোর ভারসাম্য ব্যাহত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতা এবং বিপাকীয় প্রদাহ শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গুণমান হ্রাস করতে পারে।
রাতের শিফটে কাজের সময়
রাতের শিফটে কাজ করার সময় কী খাওয়া উচিত তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিশেষ করে মিডিয়া বা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রয়েছেন এবং একটানা বসে কাজ করেন, তাদের অতিরিক্ত চা-কফি বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস থাকলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ফলে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায়। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে পেলভিক অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যা করবেন
১. একটানা বসে কাজ করা উচিত নয়। প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট অন্তর উঠে হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। স্ট্রেচিং করতে পারলে আরও ভালো হয়, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, প্রতিদিন ৩০–৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত। হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো বা সাঁতার-যে কোনো ধরনের ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং শুক্রাণুর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
৩. রাতের শিফটে কাজ করার সময় চা-কফির মাত্রা কমানো উচিত। ক্ষুধা পেলে হাতের কাছে ড্রাই ফ্রুটস রাখা ভালো। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪. অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহলপান শুক্রাণুর মান ও গতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এসব পানীয় থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত।
৫. ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাক-সবজি ও ফল রাখুন। জিংক ও সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় ও জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টিভি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, হার্ভার্ড স্কুল, টাইমস নাও ও অন্যান্য

