মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের যোগাযোগ ও অতীত সম্পর্ক নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি (হাউস ওভারসাইট কমিটি) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এপস্টেইন ফাইলস–সংশ্লিষ্ট এসব নথিতে বহুবার ট্রাম্পের নাম উঠে এসেছে। নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলোতে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ, অতীত লেনদেন এবং বিভিন্ন গোপন আলাপের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক দীপক চোপড়ার সঙ্গে ই-মেইল বিনিময়ে এপস্টেইন জানান, ট্রাম্পের স্ত্রী মারলা ম্যাপলস গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানার পর তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বাজিতে হারেন এবং ১০ হাজার ডলার মূল্যের শিশুখাদ্যে ভরা একটি ট্রাক পাঠাতে বাধ্য হন।
তিনি লিখেছিলেন, ‘যখন মারলা ম্যাপলস ট্রাম্পকে জানালেন যে, তিনি অন্তঃসত্ত্বা… তখন আমি ১০ হাজার ডলারের বাজিতে হেরে যাই।’ এ তথ্য প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। এর আগে ইভানার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ট্রাম্প নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলে মারলা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে এপস্টেইনও অতিথি ছিলেন বলে সিএনএনের আর্কাইভ ফুটেজে দেখা যায়। ১৯৯৯ সালে ম্যাপলস ও ট্রাম্পের বিচ্ছেদ ঘটে।
এসব ই-মেইল প্রসঙ্গে দীপক চোপড়া বলেন, চিকিৎসক–রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা তার নৈতিক দায়িত্ব হলেও প্রয়োজন হলে তদন্তকারীদের অনুমোদিত তথ্য দিতে তিনি প্রস্তুত।
এদিকে কমিটি আরও কিছু পুরোনো ই-মেইল প্রকাশ করেছে, যেখানে এপস্টেইন, তার সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল এবং লেখক মাইকেল উলফের মধ্যকার বার্তা রয়েছে।
২০১১ সালের এপ্রিলের একটি ই-মেইলে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘যে কুকুরটা এখনও ঘেউ ঘেউ করেনি, সে হচ্ছে ট্রাম্প।’
তবে নথিপত্রে দেখা যায়, ১৯৯০-এর দশকে অন্তত সাতবার এপস্টেইনের বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে ট্রাম্প একটি অশ্লীল, হাতে আঁকা নগ্ন নারীর ছবি চিঠিতে পাঠিয়েছিলেন, যা নিয়ে ট্রাম্প পরে দাবি করেন, সেটি ছিল নকল এবং এ জন্য তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
হোয়াইট হাউস নতুন ই-মেইল প্রকাশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এপস্টেইনের বিরক্তিকর আচরণের কারণে তাকে বহু বছর আগে মার-এ-লাগো থেকে বের করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ই-মেইলে এপস্টেইন দাবি করেন, তিনি কখনওই মার-এ-লাগোর সদস্য ছিলেন না।
সম্প্রতি ডিসচার্জ পিটিশনের চূড়ান্ত ভোট সম্পন্ন হয়েছে, ফলে এপস্টেইনের সব নথি প্রকাশের বিষয়ে এখন কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ ভোট বাধ্যতামূলক হবে। এতে ট্রাম্প–এপস্টেইন সম্পর্ক নিয়ে আরও অজানা তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পকে নিয়ে আরেক ই-মেইলে এপস্টেইন রাশিয়া–ট্রাম্প সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন। তিনি লেখেন, রুশ কূটনীতিক ভিটালি চুরকিন তাদের আলোচনার মাধ্যমে ট্রাম্পকে ভালোভাবে বুঝতেন। এমনকি তিনি সের্গেই ল্যাভরভের সহকারীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালের আরেক ই-মেইলে এপস্টেইন ট্রাম্পের বিষয়ে ‘বিপজ্জনক এবং তার শরীরে একটি ভালো কোষও নেই’ বলে মন্তব্য করেন।
নতুন এই নথিগুলো প্রকাশের পর পুরোনো বিতর্ক আবারও সরব হয়ে উঠেছে এবং ট্রাম্প–এপস্টেইন সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্র: ইউএস টুডে

