দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে হঠাৎ করে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ যেখানে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, সেখানে চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতেই দাম প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে সবজিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ কমেছে। এতে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু পেঁয়াজের চড়া দাম বিপত্তি বাধিয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি না থাকা এবং দেশি পেঁয়াজের মজুত কমে আসাকে দায়ী করছেন।
সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দেশের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৭ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমদানি শুরু হলে দাম নেমে যাবে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই, পুরনো সিন্ডিকেট আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বস্তির বাজারকে নষ্ট করতে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একজন আড়তদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’ পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতি সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের সংকট চলছে। কৃষকের হাতে আর পেঁয়াজ নেই। এতে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ এখন মাত্র ১৫ টাকা কেজি। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জ থেকে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও এই দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে ছিল।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানিয়েছেন, বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। বর্তমানে বাজার পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজনির্ভর। তিনি মনে করেন, নভেম্বরে দাম কিছুটা বেশি থাকতে পারে এবং আগামী ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বা ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ’ বাজারে এলে দাম কমতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার টন। অথচ গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা ও দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এ বছর বাজারের ‘রাজত্ব’ ছিল দেশি পেঁয়াজের হাতে। পাইকারি আড়তদাররা মনে করছেন, আমদানি হ্রাস দেশের কৃষকদের জন্য একটি ভালো দিক, কারণ এতে কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন এবং দেশের বাজার অন্য দেশের বাজারের ওপর কম নির্ভরশীল হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। এরপর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিভিন্ন জেলার পেঁয়াজ বাজারে পূর্ণ সরবরাহ শুরু করবে। এর সঙ্গে গত বছর থেকে চট্টগ্রাম জেলাতেও পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়ভাবেও পেঁয়াজ চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রামে পেঁয়াজের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, পেঁয়াজের দামের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, এক লাফে ২০ টাকার বেশি দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

