ইতালির রোমভিত্তিক নিউজ এজেন্সি নোভার ব্রাসেলস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন গ্যাব্রিয়েলে নুনজিয়াতি। ইতালীয় এই সাংবাদিক গাজা পুনর্গঠনের ব্যয়ভার নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করার পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েলে নুনজিয়াতি তার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই চাকরিচ্যুত হলেন।
দ্য ইন্টারসেপ্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নুনজিয়াতি বলেন, “আমি আমার সংবাদ সংস্থা থেকে একটি ইমেইল পাই, যেখানে জানানো হয় তারা আমার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করতে চায়।” তিনি চুক্তিভিত্তিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছিলেন।
ইতালীয় সংবাদমাধ্যম ফ্যানপেজ প্রথম এই খবর প্রকাশ করে। ঘটনাটি ঘটে ১৩ অক্টোবর, ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র পাউলা পিনহো-এর এক সংবাদ সম্মেলনে।
সেখানে নুনজিয়াতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাশিয়ার প্রতি অবস্থান ও গাজার পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা টানেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনারা বারবার বলেছেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনের ব্যয় রাশিয়াকেই বহন করতে হবে। তাহলে কি আপনি মনে করেন, ইসরায়েলকেও গাজার পুনর্গঠনের জন্য অর্থ প্রদান করা উচিত, যেহেতু তারা প্রায় সমস্ত বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে?”
পিনহো প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি “নিশ্চয়ই একটি আকর্ষণীয় প্রশ্ন,” তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
ঘটনাটির ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং নুনজিয়াতি হঠাৎ করেই আলোচনায় আসেন।
তিনি বলেন, “ভিডিওটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, অনেক বড় প্রতিক্রিয়া হয়। অনেকে আমাকে লিখে জানায়, ‘আমি তোমাকে ইনস্টাগ্রামে দেখেছি!’”
“দুই সপ্তাহ পর, ২৭ অক্টোবর, আমি নোভা নিউজ থেকে একটি ইমেইল পাই, যেখানে জানানো হয় তারা আমাদের সহযোগিতা বন্ধ করছে,” তিনি যোগ করেন।
নোভা নিউজের মুখপাত্র ফ্রানচেসকো চিভিতা দ্য ইন্টারসেপ্টকে নিশ্চিত করেছেন, সংস্থাটি নুনজিয়াতির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে, কারণ তিনি “গাজার বিষয়ে প্রযুক্তিগতভাবে ভুল” একটি প্রশ্ন করেছিলেন।
এই বরখাস্তের ঘটনায় ইতালির রাজনীতিকদের মধ্যে নিন্দা শুরু হয়।
ইতালির সংসদ সদস্য ও ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতা আনা লাউরা অররিকো বলেন, “যদি ঘটনাটি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো সংবাদমাধ্যমের জন্য লজ্জাজনক।”
নোভা নিউজের এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গ্যাব্রিয়েলকে বরখাস্ত করা হয়েছে কারণ তিনি ইউরোপীয় কমিশনকে একটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেছিলেন।”
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর “অফিসে এক ধরনের নীরবতা নেমে আসে,” এবং “পরিবেশ অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে পড়ে।”
সাংবাদিকটির মতে, এই ঘটনা “ইসরায়েল সংক্রান্ত সংবাদে ইতালীয় গণমাধ্যমে যে ধরনের সেন্সরশিপ চলে, তারই একটি প্রতীকী উদাহরণ।”
সূত্র: প্রেস টিভি

