মহান আল্লাহ পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য মানুষকে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। আল্লাহ যাদেরকে সম্পদ দান করেছেন, তাদেরকে দিয়েছেন বিশেষ দায়িত্ব। আর যাদেরকে দারিদ্র্যের জীবন দান করেছেন, তাদের জন্য পরকালে রেখেছেন অসংখ্য পুরস্কার। মহানবী (সা.) ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তির জন্য একাধিক সুসংবাদ দান করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
দরিদ্র ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ
মহানবী (সা.) ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তির জন্য যেসব সুসংবাদ দিয়েছেন, তার কয়েকটি হলো—
১. ধনী ব্যক্তির আগে জান্নাতে প্রবেশ :
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একদিন আমি একদল নিঃস্ব মুহাজিরের সঙ্গে বসলাম। তাদের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, (পরিধেয় বস্ত্র খুবই ছোট হওয়ায়) পরস্পর পরস্পরের সতর আড়াল করে বসেছিলেন। একজন পাঠক আমাদেরকে কোরআন পড়ে শুনাচ্ছিলেন। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) এসে দাঁড়ালে পাঠক তার পাঠ বন্ধ করলেন। নবী (সা.) সালাম করার পর প্রশ্ন করলেন, তোমরা কী করছিলে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! ইনি আমাদের কাছে কোরআন পড়েন, আর আমরা মহান আল্লাহর কিতাব মনোযোগ দিয়ে শুনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন ধৈর্যশীল লোক রেখেছেন, যাদের সঙ্গে আমাকেও ধৈর্য ধারণের আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে এসে বসলেন এবং আমাদের জামাতকে পূর্ণতা দিলেন। এরপর তিনি উপস্থিত লোকদের হাত দিয়ে ইশারা করে গোল হয়ে বসার আদেশ দিলেন। তারা গোলাকার হয়ে বসলেন এবং সবার চেহারা তাঁর দিকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমার মনে হয় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমি ছাড়া তাদের মধ্যে আর কাউকে চিনতে পারেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে নিঃস্ব-দুর্বল মুহাজিররা! তোমাদের জন্য কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ। তোমরা ধনীদের চেয়ে অর্ধ দিবস আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই অর্ধ দিবসের পরিমাণ হলো পাঁচশ বছর।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৬৬)
২. জান্নাতিদের ভেতর দরিদ্র বেশি হবে :
জান্নাতের অধিবাসীদের ভেতর ধনীদের তুলনায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হবে। ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই দরিদ্র। আবার জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখলাম, এর অধিকাংশ অধিবাসীই নারী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫৪৬)
৩. নবীজি (সা.)-এর দারিদ্র্যের জীবন :
জীবন যাপনের বিচারে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সাদৃশ্য বেশি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবারবর্গ মদিনায় আসার পর থেকে এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খায়নি। আর এ অবস্থায় তাঁর ওফাত হয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৪)
তিনি আরও বলেন, ‘মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবার একদিনে দুই বেলা খাবার খেলে, তার এক বেলা শুধু খেজুর খেয়ে কাটাতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৫)
৪. দরিদ্র ব্যক্তিরা জীবিকা লাভের মাধ্যম :
দরিদ্র ব্যক্তিরা নিজেরা সম্পদ থেকে বঞ্চিত হলেও তারা অন্যের জীবিকা লাভের মাধ্যম। আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা দুর্বল লোকদেরকে খুঁজে আমার কাছে নিয়ে এসো। কেননা তোমরা তোমাদের দুর্বল লোকদের উসিলায় জীবিকা ও সাহায্য লাভ করো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৯৪)
৫. দারিদ্র্য নবীপ্রেমের ভূষণ :
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) বলেন, ‘একদিন এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বলো। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, ‘যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে দারিদ্র্যের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালোবাসবে, স্রোত তার শেষ প্রান্তে যাওয়ার চেয়েও বেশি দ্রুত গতিতে দারিদ্র্য তার নিকট আগমন করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫০)
আল্লাহ সবাইকে দুর্দিনে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন। আমিন।

