জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়; এটি বৈশ্বিক দায়বদ্ধতার অংশ।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছি।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেয়া যাবে না। যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার সমাধান এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা সম্ভব। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক সমাধান করাও অপরিহার্য। তবে এর জন্য রাখাইন অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকল জাতিসত্ত্বার অংশগ্রহণে এমন একটি বন্দোবস্ত প্রয়োজন যেন রোহিঙ্গারা সমঅধিকার ও নাগরিকত্বসহ সমাজের অংশ হতে পারে।’
তিনি জানান, ‘গত আট বছর ধরে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইনে রাজনৈতিক সমাধান না আসায় এবং বৈষম্যমূলক নীতি-অভ্যাস বন্ধ না হওয়ায় সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’ এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপ এবং কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনুস।
প্রধান উপদেষ্টা আরও সতর্ক করে বলেন, ‘পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে ন্যূনতম জীবনমান টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতিমধ্যে সহায়তা ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। নতুন তহবিল না এলে রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন অর্ধেকে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।’
তিনি দাতাদের সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন দাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন অঞ্চলে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে একটি রোডম্যাপ গৃহীত হবে এবং সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।’