অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্যে দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ শনাক্ত করে তারা মহাবিশ্বের গভীর রহস্য সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, এ ঘটনা শুধু অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বকেই প্রমাণ করেনি, বরং প্রয়াত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের ভবিষ্যদ্বাণীকেও আরও দৃঢ় করেছে।
এই ঘটনা শনাক্ত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার লিভিংস্টন ও ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ডে অবস্থিত মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকারী বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে। ‘জি-ডব্লিউ২৫০১১৪’ নামে পরিচিত ওই সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরা পড়ে যন্ত্রটিতে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণগহ্বর দুটি সূর্যের ভরের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ গুণ ছিল। তারা ধীরে ঘুরছিল এবং একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে অবশেষে একীভূত হয়। সংঘর্ষ শেষে নতুন যে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়, তার ভর দাঁড়ায় সূর্যের ভরের প্রায় ৬৩ গুণ এবং তা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ বার ঘুরতে থাকে।
গবেষণায় দুটি মৌলিক তত্ত্বের সঠিকতা আবারও নিশ্চিত হয়েছে। প্রথমটি হলো ১৯৬৩ সালে গণিতবিদ রয় কের-এর তত্ত্ব, যেখানে বলা হয় কৃষ্ণগহ্বর আসলে খুবই সরল বস্তু—তাদের বর্ণনা করা যায় কেবল ভর ও ঘূর্ণনের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি হলো স্টিফেন হকিংয়ের তত্ত্ব, যা অনুসারে দুটি কৃষ্ণগহ্বর একীভূত হলে নতুনটির আয়তন আগের যেকোনো একটির তুলনায় কখনোই ছোট হয় না, বরং বড় হয় বা সমান থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের পর যে কম্পন বা অনুরণন সৃষ্টি হয়, তা ঘণ্টার মতো ধ্বনির সঙ্গে তুলনীয়। ঘণ্টায় আঘাত করলে যেমন ধ্বনি তৈরি হয়, তেমনি কৃষ্ণগহ্বরের মিলনে যে তরঙ্গ তৈরি হয়, তা তাদের ভর ও গঠন সম্পর্কে তথ্য দেয়।
এবারের শনাক্তকরণে মূল অনুরণনের পাশাপাশি অতিরিক্ত এক সুর বা ‘অভারটোন’ ধরা পড়েছে, যা এ ধরনের গবেষণায় বিরল ও যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার শুধু কৃষ্ণগহ্বরের প্রকৃতি বোঝার পথ সহজ করেনি বরং মহাকর্ষ ও কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমিল দূর করার দিকেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আরও উন্নত যন্ত্রের মাধ্যমে এ ধরনের আরও স্পষ্ট সঙ্কেত পাওয়া গেলে মহাবিশ্বের অজানা রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবেন।