spot_img

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে আমল বেশি বেশি করবেন

অবশ্যই পরুন

ক্ষণিকের দুনিয়ায় অনেক সময় নানা ধরনের বিপদ-আপদের মাধ্যমেও মহান রাব্বুল আলামিন বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কখনো এটি হতে পারে শারীরিক কোনো রোগ-ব্যাধি দিয়ে, আবার কখনো জীবন বা সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)

অর্থাৎ, পরকালে সফল হতে অবশ্যই দুনিয়াবি জীবনের পরীক্ষায় সফল হতে হবে। তাহলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা, চিরশান্তির জান্নাত। তবে এজন্য মহান আল্লাহর হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণও জরুরি।

মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে যেকোনো বিপদ-আপদে কোনোভাবেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে মহান রবের নিকট সাহায্য চাইতে হবে। পাশাপাশি কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে দুনিয়াবি জীবনে কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি চেয়ে কিংবা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে মুমিনের করণীয় কী হবে, সে বিষয়েও কুরআন ও হাদিসে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা এসেছে। নিচে কঠিন বিপদ কিংবা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মহান রবের কাছে পরিত্রাণ চাওয়ার ৩টি বিশেষ আমলের কথা তুলে ধরা হলো।

বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া

ইস্তিগফার হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেকোনো বিপদ-আপদে বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আমল। নিয়মিত বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করলে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।

ইব্‌ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করে, আল্লাহ তা’য়ালা তাকে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত করবেন এবং সব রকম দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য এমন স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮)

এ ক্ষেত্রে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ছোট্ট একটি ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। তা হলো- ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া-আতুবু ইলাইহি’ (أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ)। যার অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।

এছাড়াও নিচের ইস্তিগফারটি পড়তে পারেন-

আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

বাংলা: আস্তাগ্‌ফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল্‌-হাইয়্যুল্‌ কাইয়্যুম, ওয়া-আতুবু ইলাইহি।

যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছেন- যে এই দোয়াটি পাঠ করবে, সে ব্যক্তি যদি যুদ্ধের ময়দান থেকেও পালিয়ে আসে, তারপরও তার গুনাহ মার্জিত হবে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৭; সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭৭)।

এছাড়া দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বা সর্বোত্তম ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। আরবিতে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ 

বাংলা: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা।

হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি সে মারা যায়, তবে সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে, আর যদি ভোর হওয়ার আগেই সে মারা যায় তবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি: হাদিস: ৫৮৬৭)

নবীজির (সা.) ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ

নবীজির ওপর দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আর বান্দা হুকুম পালন করলে মহান বর খুশি হন। এতে বান্দার মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। এমনকি পবিত্র কুরাআনেও মহান আল্লাহ তা’য়ালা নবীজির (সা.) ওপর দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত-দরুদ’ পড়েন। হে ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

এ ক্ষেত্রে ছোট্ট দরুদ হলো- সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (صلى الله عليه وسلم)। অর্থ: আল্লাহ তাঁর (রাসুল সা.) প্রতি রহমত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।

এছাড়াও ইবনু আবু লায়লা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে দরুদ শরীফ পড়ার কথা এসেছে, যেটি প্রত্যেক নামাজে পাঠ করা হয়। হাদিসটি হলো- একবার কাবা ইবনু উজরা (রা.) ইবনু আবু লায়লা (রা.) এ সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন- আমি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না? একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন! আমরা বললাম, (ইয়া রাসুলাল্লাহ!) আপনাকে কীভাবে সালাম দিতে হয় তা-তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার ওপর সালাত-দরুদ আমরা কীভাবে পাঠ করব? তিনি (নবীজি সা.) বললেন, তোমরা বলবে-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

বাংলা: আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিম ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! উম্মি নবী মুহাম্মাদের (সা.) ওপর এবং মুহাম্মাদের (সা.) পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন রহমত বর্ষণ করেছেন ইব্রাহিমের (আ.) ওপর এবং ইব্রাহিমের (আ.) পরিবারের ওপর। উম্মি নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও তার পরিবারকে বরকত দান করুন, যেমন ইব্রাহিম ও তার পরিবারকে বরকত দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৯৩)

অন্যদিকে বান্দা নবীজির (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করলে এর সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন। তার ১০টি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (সুনান আন নাসায়ী, হাদিস: ১২৯৭; মেশকাত, হাদিস: ৯২২)

দোয়া ইউনূস পড়া

বিপদ-আপদে দোয়া কবুলের অন্যতম হাতিয়ার দোয়া ইউনূস। দোয়া ইউনুস মূলত সুরা আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াত। আয়াতটি হলো-

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা: লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।

অর্থ: ‘তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের দলভুক্ত।’

সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যুননুন (মাছ ওয়ালা) ইউনুস (আ.) মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন- লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন। কোনো মুসলিম যখনই এই দোয়া করে, আল্লাহ্‌ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন। (সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আশাবাদ ভ্যাটিকানের

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভ্যাটিকান। কোনো রাজনৈতিক দল, সরকারব্যবস্থা বা ব্যক্তিকে সমর্থন...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ