সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় অনেক দম্পতির মনেই একটা প্রশ্ন জাগে—আমাদের রক্তের গ্রুপ যদি এক হয়, তাহলে কি ভবিষ্যতের সন্তানের কোনো সমস্যা হতে পারে? বিশেষ করে যখন আশেপাশের কেউ বলে দেন রক্তের গ্রুপ এক হলে নাকি সমস্যা হয়, তখন দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
আসলে এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা ছড়িয়ে আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, রক্তের গ্রুপ এক হলে সাধারণভাবে কোনো সমস্যা হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আরএইচ পজিটিভ ও নেগেটিভ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার।
চলুন, চিকিৎসকের ব্যাখ্যা থেকে বিষয়টি সহজভাবে জেনে নিই।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক মানুষে মানুষে রক্তের গ্রুপ কেন আলাদা হয়। বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ ভাগ করা হয়। এবিও গ্রুপিং পদ্ধতিতে চারটি রক্তের গ্রুপ আছে—এ, বি, এবি এবং ও। এই রক্তের গ্রুপগুলোর কোনোটি সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না। তবে এবিও গ্রুপের অসামঞ্জস্যতার জন্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্ডিস হতে পারে। আরএইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ হতে পারে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ। এ ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে—
১. স্বামী-স্ত্রী দুজনের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপও পজিটিভ হয়। ফলে মায়ের সঙ্গে সন্তানের রক্তের গ্রুপের সামঞ্জস্য থাকে এবং দুজনই নিরাপদ থাকে।
২. স্বামী নেগেটিভ, স্ত্রী পজিটিভ: কোনো ঝুঁকি নেই। সন্তান পজিটিভ বা নেগেটিভ—দুটোই হতে পারে, কিন্তু এতে মা বা শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না।
৩. স্বামী পজিটিভ, স্ত্রী নেগেটিভ: এই অবস্থায় কিছুটা সতর্কতা দরকার। যদি সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয়, তাহলে মায়ের শরীরে Rh অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতের গর্ভাবস্থায় সমস্যার কারণ হতে পারে।
৪. স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ: এ ক্ষেত্রে সন্তানের রক্তের গ্রুপও নেগেটিভ হয়। ফলে কোনো সমস্যা হয় না।
রক্তের গ্রুপ এক হলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী
১. অন্তঃসত্ত্বা প্রত্যেক মায়ের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সময়ই করে নিন।
২. অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে।
৩. স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে মায়ের রক্তে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, দেখার জন্য আরএইচ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে হবে।
৪. মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকলে ২৮ সপ্তাহে মাকে অ্যান্টিবডি টিকা দিতে হবে এবং সন্তানের জন্মের পর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় মাকে টিকা দিতে হবে।
৫. যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আর টিকার কোনো ভূমিকা নেই। ওই মাকে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. মারুফা খাতুন, সহকারী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।