spot_img

অন্তর বিনষ্টকারী পাঁচটি কাজ

অবশ্যই পরুন

হৃদয় বা অন্তর মানুষের আভ্যন্তরীন জীবনযাত্রার কেন্দ্রস্থল। পবিত্র কোরআনে একে ‘ক্বলব’ বলা হয়েছে। যার অর্থই হলো ‘পরিবর্তনশীল’। এ কারণেই ঈমানদার মানুষ সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন যে, ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী, আমার হৃদয়কে দ্বীনের ওপর স্থির রাখুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২২)

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি জানি, কোন কোন বিষয় আমাদের অন্তরের পবিত্রতা নষ্ট করে, তাকে আল্লাহর স্মরণ বিরত রাখে, ইবাদতের স্বাদ অনুভবকে বাধাগ্রস্ত করে?

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর প্রিয় ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) তার মাদারিজুস সালিকীন গ্রন্থে পাঁচটি বিষাক্ত উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মানুষের হৃদয়কে দূষিত করে, ঈমান দুর্বল করে এবং আল্লাহর পথে অন্তরকে অন্ধ করে দেয়।

১. অতিরিক্ত মিশুকতা

যত্রতত্র সবার সঙ্গে মিশে যাওয়া, প্রতিটি আড্ডায় সময় দেওয়া, প্রতিটি আহ্বানে সাড়া দেওয়া। এসব কখনো কখনো হৃদয়ের স্থিরতা নষ্ট করে দেয়। মানুষ তখন নিজের আত্মিক শুদ্ধি নিয়ে ভাবার সময় পায় না। অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে আড্ডায় মজে থাকতে চায়। অথচ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা নিরর্থক কথাবার্তা শোনে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়…।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৫৫)

হূদয় তখনই সতেজ থাকে, যখন তা নিরবতা ও চিন্তার প্রশান্ত পরিবেশে আল্লাহর স্মরণে থাকে।

২. অমূলক আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনাবিলাস 

অনেকে তাদের জীবনকে কল্পনা ও উচ্চাকাঙ্খার বেড়াজালে আটকে ফেলে। কিন্তু বাস্তবে স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ‘যদি আমি ধনী হতাম, যদি আমি নেতা হতাম, যদি আমি চাইলেই সব পেতাম’। এই ‘যদি’ ও ‘কল্পনা’ তাদের মনোবল নষ্ট করে দেয়। তারা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর্থিক ভাবে খুব বেশি এগোতে পারে না। অথচ এমন দুর্বল চিত্তের অধিকারী হওয়া মুমিনের ভূষণ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন শক্তিশালী হলে সে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, দুর্বল মুমিন অপেক্ষা।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)

অতএব কল্পনায় আটকে থেকে সময় বিনষ্ট না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে অন্তর ও জীবনের শক্তি।

৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ওপর নির্ভরতা

মানুষের হৃদয় যখন সম্পদ, মানুষ, পদ-পদবী বা খ্যাতির ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। তখন তা তাওহিদের বিশুদ্ধতা হারায়। অথচ ঈমানের মূল ভিত্তি হলো, একমাত্র আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ভয় ও ভরসা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া যারা অন্যকে বন্ধু বানায়, তারা তো মাকড়সার ঘরের মতো ঘর তৈরি করে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪১)

কাজেই এই ঠুনকো মাকড়সার ঘরের মতো দুনিয়াবী বিষয়ের ওপর নয় বরং একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতাই অন্তরের নিরাপত্তা।

৪. অতিভোজন

ভরাপেট খাওয়া শুধু শরীর নয়, আত্মাকেও ভারী করে তোলে। এতে ঘুম বাড়ে, অলসতা আসে, ইবাদতে মন বসে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ পেট থেকে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)

আল্লাহর পথে প্রাণবন্ত হূদয়ের জন্য প্রয়োজন প্রাণ চঞ্চল দেহ। যা কেবল পরিমিত খাদ্য গ্রহণেই সম্ভব। অতিভোজনে আসে আলস্য। তাই আল্লাহর পথে অলস শরীর কোনো কাজের নয়।

৫. অতিরিক্ত ঘুম

ঘুম খুব প্রয়োজনীয় বিষয়; কিন্তু তা যেন জীবনের উদ্দেশ্য না হয়ে দাঁড়ায়। ঘুম যদি মানুষকে তাহাজ্জুদের স্বাদ থেকে, ফজরের আলো থেকে বঞ্চিত করে, তবে তা অন্তরের জন্য ঘোর অন্ধকার।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সে সব বান্দার প্রশংসা করেছেন, যারা রাত্রির কিছু অংশ আল্লাহর স্মরণে কাটায় (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৭)

যারা রাত কাটায় ঘুমে ডুবে, তাদের অন্তরেও জমে অজ্ঞতার ধূলিকণা।

হৃদয় যতটা বিশুদ্ধ, ইবাদত ততটাই মধুর হয়। হৃদয় যতটা আল্লাহর দিকে ফেরে, ততটাই দুনিয়ার মোহ ফিকে হয়ে যায়। তাই আসুন, নিজের অন্তরের শত্রুদের চিনে নেই। আর সেই পাঁচ শত্রু থেকে নিজের আত্মাকে রক্ষা করি। আর আল্লাহর দিকে এক সজীব হৃদয় নিয়ে ফিরি।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এসব অন্তর বিনাশী বিষয় থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক

সর্বশেষ সংবাদ

ভারত কেন শেখ হাসিনাকে পুশব্যাক করে না— প্রশ্ন রিজভীর

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত শেখ হাসিনাকে জায়গা দিয়েছে, ওখানে বাংলা ভাষাভাষী...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ