হার্টফোর্ডশায়ারের এক শান্ত প্রান্তরে, যেখানে গমের শীষ বাতাসে দুলে ওঠে, সেখানে লুকিয়ে আছে আধুনিক পৃথিবীর এক অজানা ইতিহাস। ১৮৪৩ সালে জন বেনেট লজ নামের এক ভিক্টোরিয়ান জমিদার শুরু করেছিলেন এক সহজ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, তা হলো গমের ফলন কীভাবে বাড়ানো যায়? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে জমা হতে থাকে বছরের পর বছর ধরে গম, খড় আর মাটির নমুনা। বোতলে ভরে রেখে দেওয়া হয় এক নিঃশব্দ প্রত্যাশায়।
প্রায় দুই শতক পর, সেই বোতলগুলোর একটি খুলে দেখা গেলো এক অপ্রত্যাশিত তথ্য। মাটির ভেতরে লুকিয়ে আছে ছোট ছোট প্লাস্টিক কণা। এগুলোই মাইক্রোপ্লাস্টিক, যেগুলো এখন শুধু মাটিতে নয়, আমাদের দেহের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে।
এই কণা শুধু মাটিতে নয়, আমাদের শরীরেও প্রবেশ করছে। খাবারে, পানিতে, এমনকি শ্বাসের সাথে প্রবেশ করছে এ নীরব ঘাতক।
গবেষণা বলছে, এগুলো এখন মানুষের রক্ত, লালা, শ্লেষ্মা, বুকের দুধ, যকৃৎ, বৃক্ক, প্লীহা, মস্তিষ্ক এবং অবাক করা ভাবে, হাড়ের ভেতরেও পাওয়া গেছে। বিবিসি’র এক গবেষণাধর্মী নিবন্ধে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব কণা শরীরের ভেতরে কী করছে?
এই উত্তর খুঁজতেই ২০২৫ সালের শুরুতে লন্ডনের এক গোপন ল্যাবে সাহসী এক পরীক্ষা চালানো হয়। আটজন স্বেচ্ছাসেবক এক ধরনের দ্রবণ পান করেন, যার মধ্যে ছিল মাইক্রোপ্লাস্টিক। এটিই বিশ্বের প্রথম ‘প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে প্লাস্টিক খাইয়ে দেখা হয়, মানবদেহে এর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী।
পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা বলছেন, এটি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের দেহে ঠিক কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান।