ইউক্রেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী ইউলিয়া স্ভিরিদেনকো। ইউক্রেনের পার্লামেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে নিয়োগে সম্মতি দিয়েছে। আইনপ্রণেতা অ্যালেক্সি গনচারেঙ্কো জানিয়েছেন, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৬২ জন সংসদ সদস্য, যেখানে প্রয়োজন ছিল ২২৬ ভোট। বিরোধিতা করেছেন ২২ জন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আজকের রাদা অধিবেশনেই স্ভিরিদেনকো সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করবেন বলে জানা গেছে। তবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর জন্য প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। ইতোমধ্যে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে রুস্তেম উমেরভের স্থলাভিষিক্ত হবেন ডেনিস শ্মিহাল, আর পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন বর্তমান মন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিগা।
সাংবিধানিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের অভিযোগ
সংবিধান অনুযায়ী, ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী মনোনয়ন করতে হয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের মাধ্যমে। এরপর প্রেসিডেন্ট তা আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদে পাঠান। তবে স্ভিরিদেনকোর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে, ১৪ জুলাই জেলেনস্কি ইউলিয়া স্ভিরিদেনকোকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। ১৬ জুলাই পার্লামেন্টে প্রার্থিতা জমা দেন স্ভিরিদেনকোর। একই দিন রাডা আনুষ্ঠানিকভাবে ডেনিস শ্মিগালকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এর ফলে ইউক্রেনীয় আইন অনুসারে পুরো সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদত্যাগ করে।
এই ক্ষেত্রে জেলেনস্কি ইতোমধ্যেই নিজেই প্রস্তাবটি এগিয়ে নিয়ে যান। সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল দল (ক্ষমতাসীন) ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় এ নিয়ে বৈঠকও ডাকে।
ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের আশঙ্কা
ইউক্রেনের রাজনীতিতে স্ভিরিদেনকোকে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রেই ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই নিয়োগের মাধ্যমে ইয়ারমাক সরকারের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও কিয়েভ সরকারের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে নিযুক্ত প্রতিনিধি রোদিয়ন মিরোশনিক রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, স্ভিরিদেনকো ইয়ারমাকের খুব ঘনিষ্ঠ। ফলে এখন থেকে পুরো মন্ত্রিসভা তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই আজারভ (২০১০–২০১৪) এই নিয়োগকে “সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন” বলে মন্তব্য করেছেন। তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া বাকি সব মন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করার অধিকার নতুন প্রধানমন্ত্রীর, প্রেসিডেন্টের নয়। সেইসঙ্গে এসব প্রার্থীকে অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ সংসদ, প্রেসিডেন্ট নন।
স্বতন্ত্র এমপি আরতিয়ম দমিত্রুকও এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সংবিধান লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, স্ভিরিদেনকোর এই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির একমাত্র যোগ্যতা হলো—জেলেনস্কির প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য।