সারাদিন কাজের চাপ, সময়ের অভাব, চারপাশের টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে দিন শেষে শরীরের মতোই ক্লান্ত হয় মনও। কিন্তু শরীর অসুস্থ হলে যেমন দৌড়ে যাই চিকিৎসকের কাছে, মন ক্লান্ত হলে তেমনটা কি করি? বেশিরভাগ সময়েই না। অথচ মানসিক সুস্থতা ছাড়া শরীরের সুস্থতাও অসম্ভব। নীরবে জমতে থাকা মানসিক চাপ একসময় হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক। আমাদের কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসই অজান্তেই সেই চাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই মন ভালো রাখতে হলে, আজ থেকেই বদল আনতে হবে কিছু ছোট ছোট অভ্যাসে।
১) ডিজিটাল দুনিয়ার প্রতি আমাদের আকর্ষণ প্রচুর। বিনোদনের জন্য মোবাইলের এক ‘ক্লিকেই’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ থেকে অনলাইন গেমসে ডুবে যায় আট থেকে আশি বছরের সবাই। তবে সেই সময়েরও একটা সীমারেখা দরকার। ডিজিটাল দুনিয়ার আসক্তিতে ডুবলে জীবনে খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। তার চেয়ে কিছুটা সময় বই পড়ে, পছন্দের রান্না করে, গান শুনে, ছবি এঁকে— যার যা ভালো লাগে, তা নিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
২) ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার— এখন আমরা এসব মাধ্যমে বন্ধু খুঁজি। সারাক্ষণ ফোনের সংস্পর্শে থাকার ফলে পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের থেকে ক্রমেই দূরে চলে যাচ্ছি আমরা। মনোবিদরা বলছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় বন্ধুত্ব তৈরি না করে বাস্তবে কাছের মানুষদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে হবে। পরিবার-পরিজন, কাছের মানুষের সঙ্গে ভালো সময় কাটান। সময় কাটানো মানে সেটি দীর্ঘ হতে হবে এমনটা নয়, যতটা সময় কাটাচ্ছেন, তা যেন সুন্দর হয়।
৩) একঘেয়ে জীবনে মাঝেমধ্যে বিরতির দরকার হয়। ট্রেনের মতো ছুটে চলা জীবনে মাঝেমধ্যে লাগাম টানুন। কাজ সারাজীবন থাকবে, কিন্তু নিজের সেরাটুকু দেওয়ার জন্যেও কিছুটা প্রস্তুতির দরকার হয়। মন খারাপ হোক বা না হোক, সময় পেলেই ঘুরে আসুন। দরকার হলে সময় বের করেই ঘুরে আসুন। আপনার মনের দেখাশোনার দায়িত্ব আপনার নিজের। চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করুন। ইচ্ছে অনুযায়ী চলুন। এগুলোই মনের ক্ষতে একটু একটু করে প্রলেপ লাগাবে।
৪) কেবল শরীরের জন্যই নয়, মনের জন্যও ৮ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। অনিদ্রাও কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই রাত জেগে সিরিজ না দেখে সময় মতো ঘুমিয়ে পড়ুন। অযথা রাত জাগার অভ্যাস থাকলে সবার আগে সেই অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
৫) মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা করার বিষয় নয়। মনের কোণে যদি এতটুকুও উদ্বেগের মেঘ জমাট বাঁধে, তা চেপে রাখবেন না। যাকে বললে বা যাদের বললে হালকা হতে পারবেন, দেরি না করে বলে ফেলুন। সমস্যা চেপে রাখলে আরও বাড়তে থাকে। লাভ কিছু হয় না। দরকার হলে মনোবিদের সাহায্য নিন। কিন্তু মনের মধ্যে যন্ত্রণা আটকে রেখে নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।